রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

রং-তুলির আঁচড় লেগেছে সৈকতের বালিয়াড়িতে

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪২

পর্যটন শিল্প বর্তমান বিশ্বে অন্যতম বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত (১২০ কিলোমিটার) ঘিরে পর্যটন অঞ্চল কক্সবাজার দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে ইতোমধ্যে রঙিন সাজে সেজে উঠেছে কক্সবাজার। সৈকতের বালিয়াড়ির দিকে তাকালে মনে হবে রং তুলির আঁচড় লেগেছে। কক্সবাজার পর্যটন শিল্প থেকে প্রতি বছর হাজার কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকার কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধাকে কাজে লাগানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বের বুকে এক অনন্য পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করছেন একের পর এক মহাপরিকল্পনা। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে বদলে যাবে কক্সবাজার। বাড়বে রাজস্ব, দূর হবে বেকারত্বের সমস্যা। গতিশীল হবে দেশের পর্যটন শিল্প।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১১টি মেগা প্রকল্পসহ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ছোট-বড় ৬৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১৩ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, রেললাইন স্থাপন, হাইটেক পার্ক, নৌবাহিনীর সাব-মেরিন ঘাঁটি নির্মাণ, প্রকল্প ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস নির্মাণ, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, সাবরাং এক্সক্লোভিস জোন, মহেশখালী উপজেলার চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, টেকনাফ জালিয়ার দ্বীপ এক্সক্লুসিভ ‘নাফ টুুরিজম পার্ক’ এবং এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ চলমান। আগামী দুই বছরে এসব প্রকল্পের সুবিধা পাবেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে ছোট প্রকল্পের বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়েছে আর বড় প্রকল্পগুলোর ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে কক্সবাজারের অর্থনীতি চেহারা।

কক্সবাজারে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা একদিকে যেমন পাহাড়ে ঘেরা সবুজ প্রকৃতি দেখতে পান, অন্যদিকে উপভোগ করতে পারেন সমুদ্র সৈকতের স্পর্শ। সেই সঙ্গে প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া অকৃত্রিম বালুকারাশি, মনকাড়া নীল জলরাশি, দিগন্ত সারি সারি ঝাউবাগান, আলোক উজ্জ¦ল সৈকত, সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে উল্লাসে মেতে উঠতে পারেন সহজেই। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প এখন শুধু শীতকাল কেন্দ্রিক নয়, বরং সারা বছরের। তবে যে কোনো উৎসবে পর্যটকের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। পর্যটন স্পটের মধ্যে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এখানে আছে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা। এগুলো হলো- লাবণী বিচ, সুগন্ধা বিচ, কলাতলি বিচ, হিমছড়ি, ইনানী বিচ, মেরিন ড্রাইভ রোড, সেন্ট মার্টিন, রামু বৌদ্ধ বিহার, ঝর্ণা হিমছড়ি, পাথুরে বিচ ইনানী, টেকনাফের মাথিনের ক‚প, ছেঁড়াদিয়া দ্বীপ, সাবরাং অর্থনীতিক জোন, হাইটেক পার্ক, জালিয়ার দ্বীপ, টেকনাফ নেটং পাহাড়, রাখাইন সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ মন্দির ও প্যাগোডা, বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ ইত্যাদি। কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে নতুন করে আশার সঞ্চার করছে একটি মেগা প্রকল্প, যেটি ‘সাবরাং টুুরিজম অর্থনৈতিক অঞ্চল’, যা বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারসহ দেশের পর্যটন শিল্পের অর্থনীতি আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

এদিকে, কক্সবাজারে বিমানবন্দর আধুনিকভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে। এই বিমানবন্দরের ১০ হাজার ৭০০ ফুট দীর্ঘ রানওয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে বঙ্গোপসাগরে। সুপরিসর রানওয়েতে প্রতিনিয়ত বোয়িং ৭৭৭ এবং ৭৪৭ এর মতো বড় বিমানে একসঙ্গে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে। অবতরণের সময় ভ্রমণকারীরা পাবেন সমুদ্রের জলছোঁয়ার এক ঝুলন্ত অনুভূতি। পরিকল্পিত পর্যটনের জন্য গোছানো হচ্ছে সাবরাং ইউনিয়নকে। নীল জলরাশির এই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করেই পাহাড় ও সাগরে বৈচিত্র্যময় দৃশ্য। সেখানে থাকবে ইকো-ট্যুরিজম, মেরিন অ্যাকুরিয়ামসহ বিদেশি পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা। শুধু পর্যটন নয়, এই জনপদ অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটাতে শিল্প খাতেও সেজে উঠছে আধুনিক অবকাঠামোর মাধ্যমে। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। থাকবে এলএনজি টার্মিনালও।

লাবণী মার্কেটের ব্যবসায়ী শামশুল আলম বলেন, ‘পর্যটন উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছে কক্সবাজারের সর্বত্র। এখন কানায় কানায় পর্যটক পূর্ণ হওয়ায় সব ব্যবসা চাঙ্গা। বিশেষ করে আবাসিক হোটেল ছাড়াও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেশ সরগরম। তাছাড়া জমজমাট ব্যবসা চলছে সৈকত এলাকার বার্মিজ মার্কেটগুলোতে। ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় এখানে। বিশেষ করে বার্মিজ আচার, বাদাম, শামুক-ঝিনুকের ঘর সাজানোর উপকরণ এবং শুঁটকিসহ নানা পণ্যের কেনাবেচায় ব্যস্ত দোকানিরা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবেই আমরা যে ইকো সিস্টেম পেয়েছি, সেটা আমাদের ব্র্যান্ডিং। আমি চাই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে শুধু সৈকত নয়, পুরো কক্সবাজারের উন্নয়ন।’

কক্সবাজার সদর-রামু-ঈদগাঁও আসনের সংসদ সদস্য সায়মুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘কক্সবাজারে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে বড় পরিসরে।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে