বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দাম্পত্য কলহের জের ধরে স্ত্রী রাশিদা বেগমকে কুপিয়ে নৃশংশভাবে হত্যার পর মহাসড়কের পাশে মরদেহ ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। আর স্ত্রীকে হত্যার পর এক বছরের শিশু সন্তানকে অন্যত্র ফেলে পালিয়ে যায় সে। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাইপাস মহাসড়কের পাশ থেকে ওই নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার কওে পুলিশ। পরে রাশিদা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুনি তামিম শেখকে গোপালগঞ্জ জেলার বেদগ্রাম এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বুধবার দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাইপাস মহাসড়কের পাশে একটি ঘেরের পাড় থেকে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ উদ্ধারের সময়ে শিশুর কান্নার আওয়াজ পায় পুলিশ সদস্যরা। পরে তল্লাশি চালিয়ে মায়ের মরদেহের মাত্র ৫ শত গজ দূরে সড়কের পাশ থেকে দশ মাস বয়সী এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়। পরে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, মরদেহটি আগৈলঝাড়া উপজেলার নগড়বাড়ি গ্রামের মৃত করিম শাহ’র মেয়ে রাশিদা বেগম (৩৫)।
আর ১০ মাসের শিশুটি তারই সন্তান তানিম। ওসি আরও জানান, মরদেহ উদ্ধারের পরপরই ঘটনার পারিপার্শিক অবস্থা দেখে নিহত রাশিদার স্বামীর বাড়িতে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রেফতারও করা হয় তার স্বামী তামিম শেখকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তামিম শেখ পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছে, সেইসাথে থানায় হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি সরোয়ার।
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম জানান, লাশ উদ্ধারের ৩ ঘণ্টার মধ্যে পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার বেদগ্রাম থেকে নিহত রাশিদার স্বামী তামিম শেখকে রক্তমাখা জুতা, জামাপড়া অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। সে ওই এলাকার আনোয়ার শেখের ছেলে।
ঘাতক স্বামীর বরাত দিয়ে তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে দাম্পত্য কলহের জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। নিহত রাশিদা এবং ঘাতক তামিম এর আগেও বিয়ে ছিল। দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তামিমের আগের স্ত্রীর দুটি ছেলে আছে। রাশিদার ঘরে তার ১০ মাস বয়সী তানিম নামে এক ছেলে আছে। অপরদিকে রাশিদা তার স্বামীর প্রথম স্ত্রীর কারণে আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের ১নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন এলকায় একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঘটনার দিন বুধবার (১৯ জানুয়ারি) নিহত রাশিদাকে নিয়ে গোপালগঞ্জের একটি হোটেলে অবস্থান করেন স্বামী তামিম। রাত ৮টার পরে সেখান থেকে বের হয়ে অপর লোকজনের সহায়তায় রাশিদাকে হত্যা করে। পরবর্তীতে গভীর রাতে একটি মাহেন্দ্র ভাড়া করে আগৈলঝাড়ার বাইপাস মহাসড়কের পাশে একটি ঘেরের পাড়ে রাশিদার মরদেহ ও শিশু সন্তানকে জীবিত ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। হত্যার আলামত উদ্ধার ও অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান তিনি। এদিকে নিহত রাশিদার ভাই আলামিন শাহ বাদী হয়ে তামিম শেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনকে আসামি করে আগৈলঝাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
যাযাদি/ এস
Copyright JaiJaiDin ©2022
Design and developed by Orangebd