বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোন মামলা না করে বিলশপুরে মারামারি ও পুলিশের গুলির ঘটনায় জিডিতে দায়সারা

জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪৫

শরীয়তপুরের জাজিরায় বিলাশপুর ইউনিয়নের স্থানীয় চেয়ারম্যান আঃ কুদ্দুস বেপারী ও ফারুক মাদবরের গ্রুপের সাথে জলিল মাদবর ও সালেক মাদবর গ্রুপের মারামারির ঘটনায় প্রায় ৫ শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এছাড়া জাজিরা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ রাউন্ড শর্ট গানের ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।

তবে এই ঘটনায় কয়েকজন গুরুতরসহ অন্তত ৭ জন আহত হলেও জাজিরা থানায় কোন মামলা হয়নি। ভুক্তভোগী কেউ মামলা না করলেও জাজিরা থানা পুলিশ নিজেরাই বাদী হয়ে মামলা করবে বলে জানিয়েছিলো সোমবার। কিন্তু মারামারি করা দুই পক্ষ মিমাংসা হয়ে যাওয়ায় তারা কোন মামলা দেয়নি। এমনকি পুলিশও কোন মামলা না করে শুধুমাত্র দুইটি সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সেরেছে।

ঘটনার দিন সোমবার ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন জায়গা থেকে অন্তত ৫ জনকে আটক করা হলেও সন্ধ্যায় জাজিরা থানায় বসে দুই পক্ষের মিমাংসা হওয়ার পরে মুচলেকা রেখে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘটনায় প্রথমে আটককৃতদের থানায় হাজির করা ও গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার বিষয়ে ৯৯৯/২৩ নম্বরের একটি এবং আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে ১০০৮/২৩ নম্বরের একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী দুই পক্ষ আপোষ হয়ে যাওয়ায় তারা কোন মামলা করেনি। যেহেতু তারা কোন মামলা কিংবা অভিযোগ করেনি এবং কোন পুলিশ সদস্যও আহত হয়নি, সুতরাং পুলিশের এ বিষয়ে আর কিছুই করার নেই। তবে যেহেতু তারা ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে তাই তারা সোমবার দুইটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।

উল্লেখ্যঃ দীর্ঘদিন যাবতই জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। নিয়মিত বড় ধরনের সংঘর্ষ না ঘটলেও ছোটখাটো ঝামেলা এবং আতঙ্কিত পরিবেশ বিরাজ করে সবসময়ই।

সবশেষ গতকাল সোমবার (২৩-জানুয়ারি) সকালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূণরায় দু'পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৫ শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জাজিরা থানা পুলিশ ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে বোমার আঘাতে ও টেটা বিদ্ধ হয়ে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে। যার মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।

তবে বিষয়টি উদ্বেকজনক হিসেবে দেখছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী নিয়মিত এই রকম বিচারহীনতা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব ভূমিকা এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনাকে আরও উষ্কে দেয় বলে দাবী অনেকের।

জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ রহমান হাওলাদার জানান, এত বড় একটি ঘটনায় কোন কার্যকরী ব্যবস্থা যদি গ্রহণ না করা হয় তাহলে এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে। আমরা আশা করবো প্রশাসন শক্ত ভূমিকা পালন করবে এই বিষয়ে।

বিলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে দায়বদ্ধ বলে তাদের কথা আমাদের মানতে হয়। এত বড় একটি ঘটনায় আমরা চেয়েছিলাম মামলা করতে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের মিমাংসা করে দেয়া হয়। যার ফলে কোন মামলাই হয়নি। তবে এ ধরনের ঘটনায় মামলা না হওয়া মানে বিচার না হওয়া, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনাকে আরও উস্কে দিবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন এর শরীয়তপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জে এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, এত বড় একটি ঘটনায় যদি কোন মামলা না হয় তাহলে এই ধরনের ঘটনা আরও উষ্কে যেতে পারে। আমরা চাই প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে শক্ত ভূমিকা পালন করে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করবে।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কামরুল হাসান সোহেল জানান, আমরা চেষ্টা করবো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সূধীজনদের নিয়ে এলাকাভিত্তিক কাজ করার মাধ্যমে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করার। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে