বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে ফিরে ভাই-বোন সভাপতি শাজাহানপুরে স্কুলে অনিয়মই যেন নিয়ম

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ০৬ মার্চ ২০২৩, ১৭:৩৮
আপডেট  : ০৬ মার্চ ২০২৩, ১৮:০০

বগুড়ার শাজাহানপুরে আড়িয়া- রহিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে কোটি টাকা লুটপাট, শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট, সরকারী বিধি লংঘন ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

আর নির্বাচন ছাড়া বছরের পর বছর ঘুরে-ফিরে ভাই-বোন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়ে এসব করছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির আজীবন দাাতা সদস্য আবু তালেব ও শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাহিদুল হক আরজু। তারা এসব অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেছেন।

স্থানীয় জনসাধারন এসব ঘটনা নিশ্চিত করে জানান। আইনের ফাক ফোকরে এই মামলাগুলো দীর্ঘজীবি করে রেখে বিদ্যালয়টিতে একবার বোন আরেকবার ভাই সভাপতি হয়ে এসব করছেন। আর আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ায় স্কুলটির অনিয়মগুলোই এখন নিয়মে পরিনত হয়ে পড়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারী বিধি উপেক্ষা করে স্কুল ভবনের নীচতলা মার্কেট নির্মান করা হয়েছে এবং সেখানে ৫৮ টি দোকান ঘর নির্মান করে প্রতিটি দোকান ঘড় থেকে ৪ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পজিশন বিক্রি করেছে।

হিসেব মতে এই টাকার পরিমান দাড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এছাড়াও কয়েক বছরে দোকানগুলো থেকে ভাড়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়ের টাকা গ্রহন করা হয়েছে। সব মিলে আদায়কৃত প্রায় তিন কোটি টাকা।

এসব টাকা ওই বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে (সঞ্চয়ী হিসাব নং ৪২০০০১০০০২৭৯৯ রুপালী ব্যাংক লিঃ বগুড়া ক্যান্ট শাখায়) জমা রাখা হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক একাউন্টের তথ্যসুত্র এসব নিশ্চিত করে ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আরঙ্গজেব এ সংক্রান্ত তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আর প্রধান শিক্ষক মোনায়েম বলেন “এসব গোপনীয় বিষয় তাই বলা যাবেনা। এদিকে ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা না রাখাকে বেআইনি বলেছেন বগুড়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হযরত আলী।

তথ্য অনুসন্ধানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রদত্ত ২০০৯ সালের সরকারি প্রজ্ঞাপন ও বিধানের ৪৫ ধারায় দেখাযায়, সেখানে উল্লেখ আছে, গভর্ণিং বডি বা ক্ষেত্রমত ম্যানেজিং কমিটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল আয় ব্যাংক একাউন্টে জমা করতে হবে এবং উপ-প্রবিধান (৫) এর বিধান মতে সকল দায় ক্রসড চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। ধারা ৪৫ এর উপধারা ৪ এ আরও বলা হয়েছে কোনক্রমেই আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না করে নগদে (ঈধংযঃ ড় পধংয) ব্যায় করা যাবেনা।

এছাড়া বিধি বহির্ভুতভাবে বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীকে এডহক কমিটি কর্তৃক পুনঃবহাল করে বারবার সভাপতির আসনে বসার সুযোগ করে নেয়া। অনিয়মগুলোতে স্বাক্ষর নিয়ে বৈধতা দেয়া। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক পদে ৩ বছরের পুর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও মোনায়েমকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান করা এবং পাশেই নিজস্ব স্কুল করে ছাত্রছাত্রী সরিয়ে নেয়া সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সভাপতি আরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়টির সদ্য অবসরে যাওয়া দপ্তরী কাম প্রহরী রাজিবুল ইসলাম আরজু এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, বকেয়া বেতন বাবদ কয়েক হাজার টাকা তিনি পাবেন। কিন্তু উৎকোচ না দেয়ায় দুই বছর ধরে ঐ বিলে স্বাক্ষর করছে না সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় সমাজসেবক আবদুল মজিদ সহ এলাকাবাসি জানান, স্কুলটিতে অনিয়মের কারনে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে পড়েছে। তথাপি বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে নানা অনিয়মের কথা জানায় ছাত্র- ছাত্রীরা। তাই শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে বিষয়গুলোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী এলাকাবাসীর।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে