বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

স্বাধীনতা তুমি রবি ঠাকুরের অজর কবিতা -সৈয়দা সাদিয়া নুরিয়া

নানিয়ারচর (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি
  ২৬ মার্চ ২০২৩, ১০:০৪
স্বাধীনতা তুমি রবি ঠাকুরের অজর কবিতা -সৈয়দা সাদিয়া নুরিয়া
স্বাধীনতা তুমি রবি ঠাকুরের অজর কবিতা -সৈয়দা সাদিয়া নুরিয়া

জাতীয় জীবনের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে গৌরবের স্মৃতি নিয়ে আবারও ফিরে এসেছে চির অম্লান ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের এই মহান স্বাধীনতা, স্বাধীন আমি, স্বাধীন আমারা,তাইতো নিশ্বাসে বিশ্বাসে তুমি,স্বাধীনতা তুমি রবি ঠাকুরের অজর কবিতা।

রোববার (২৬ মার্চ) নানিয়ারচরে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এদিন ভোরে উপজেলা প্রশাসনের উদ‍্যোগে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সূচনা হয়।

এসময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সাদিয়া নুরিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ভূইয়া,বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়নুল হক,উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা,ভাইস চেয়ারম্যান নুরজামাল হাওলাদার,উপজেলা আওয়ামীগ সভাপতি মো: আব্দুল ওহাব হাওলাদার,ওসি সুজন হালদার, উপজেলা বিএনপির সভাপতি,মো: নুরুজ্জামান হাওলাদার নানিয়ারচর প্রেসক্লাব সম্পাদক মো: নাজমুল হোসেন রনি,মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ,উপজেলার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এছাড়া উপজেলা মাঠ সংলগ্ন সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষজন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এর ২৬শে মার্চ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সকাল থেকে ঢল নামে মানুষের।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া নুরিয়া বলেন,অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। কিন্তু এর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারছি। স্বাধীনতা অর্জন করতে আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। পাহাড়সম মনোবল নিয়ে কখনও কোনো জাতি পরাধীন থাকতে পারে না। বাঙালি জাতি এমনই এক বীরের জাতি। স্বাধীনতা আমাদের অহংকার। মার্চ মাস আমাদের অগ্নিঝরা গৌরবের মাস। অহংকার ও প্রেরণার মাস। স্বাধীনতা ঘোষণার মাস। আনুষ্ঠানিক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাস।

সারা বিশ্ব জানে, দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। বিশ্বের অন্য কোনো দেশের ইতিহাসে এমন চিত্র দেখা যায়নি। স্বাধীনতা আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহস জোগায়। আমাদের দেশ দ্রুত উন্নত হচ্ছে। আমরা এখন একটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক হতে চলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বের দরবারে আমাদের দেশ একদিন নেতৃত্ব দেবে। বিজয়ের পতাকা আমাদের সবসময় উড়বে।

অগ্নিঝরা মার্চের শুরু থেকেই মূলত বাঙালির ধারাবাহিক স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত প্রতিরোধ শুরু। একাত্তরের এই মাসে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এক বিক্ষুব্ধ জনপদে। এ মাসে উড়ানো হয়েছিল মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। এ মাসেই পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক ইয়াহিয়া খান এক ফরমানের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দেন। তার সেই অবৈধ এবং স্বৈরাচারী ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালি জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। স্বাধীনতা ঘোষণা শুরু করা ছাড়া অধিকার আদায়ের আর কোনো বিকল্প নেই।

পাকিস্তানি শাসকদের এই মনোভাবের বিস্ফোরণ ঘটেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্রের মধ্যে। বটতলার সমাবেশে ইয়াহিয়ার স্বৈরাচারী ঘোষণার ধিক্কার জানানো হয় এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বটতলার ঐতিহাসিক সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি উত্তোলন করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস এই পতাকাই বিবেচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে।

এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভা সর্বাত্মকভাবে সফল করার প্রস্তুতি চালায় আপামর জনসাধারণ। আর এই জনসভাকে কেন্দ্র করে মুক্তিপাগল বাঙালির মধ্যে এক অন্য ধরনের গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের ললাটেও তখন চিন্তার বলিরেখা। ওই জনসভায় বঙ্গবন্ধু কি স্বাধীনতার ডাক দেবেন? দিলে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে এ নিয়ে পুরো পাকিস্তানেই তোলপাড় চলছিল। একদিকে জনসভার প্রস্তুতি, অন্যদিকে গোটা বাংলাদেশেই উত্তাল আন্দোলন-বিক্ষোভে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি বাঙালির চোখে-মুখে একই প্রত্যাশা পাকিস্তানি দখলদারদের হটিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ছিনিয়ে আনা। আর সেই লক্ষ্যে পূরণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির দামাল ছেলেরা সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণ রেডিওতে প্রচার না করায় প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বাংলার মানুষ। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে বেতারকর্মীরা। বন্ধ হয়ে যায় রেডিওর সম্প্রচার। ফলে ৮ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ রেডিওতে প্রচারে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে বাঙালি জাতি নতুন করে স্বাধীনতায় উদীপ্ত হয়ে ওঠে। ঘরে ঘরে শুরু হয় স্বাধীনতার প্রস্তুতি। এক কথায় গোটা পূর্ব বাংলা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হয়।

শুরু হয় অদম্য সাহস আর আত্মপ্রত্যয়ের স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যে আগুন জ্বলে উঠেছিল, মার্চে এসে সেই আগুন যেন ছড়িয়ে পড়ে বাংলার সর্বত্র। এরপর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা এবং ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে একাত্তরের মার্চ বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে নতুন বার্তা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এর আগে ২৫ মার্চ রাত ১টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।

২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানিরা বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধনে নামে। ঢাকার রাস্তায় সৈন্যরা নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করে। এরপরের ঘটনাপ্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়। আবালবৃদ্ধবনিতা যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা। এ ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে অগ্নিঝরা এ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব বীর সেনানির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। আবালবৃদ্ধবনিতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক অগ্নিঝরা মার্চের গৌরব ও প্রেরণা।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে