শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে প্রবাসী স্ত্রীকে ঘরবন্দি করে মারধর, থানায় মামলা

বিবাদীর অনৈতিক পাল্টা মামলা না নেওয়ায় ওসিকে ‘ফাঁসানোর চেষ্টা’
নুরউদ্দীন খান (সাগর), চট্টগ্রাম
  ০১ জুন ২০২৩, ১৬:২০
আপডেট  : ০১ জুন ২০২৩, ১৭:২০

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় প্রবাসী স্ত্রীকে ঘরবন্দি করে মারধরসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম নগরীর মোহরা ওয়ার্ড ‘এ’ ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে । মারধর করে ঘরবন্দি করে রাখার ঘটনায় গত ১৪ মে চান্দগাঁও থানার মামলা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন মো. রফিক (৪৬) ও তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা শিফা (২৫), মোহরা ওয়ার্ড ‘এ’ ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (৪৮), মো. রোহেদ (৩৫) এবং তাদের ভাতিজা মো. আরিফুল ইসলামসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজন। আসামীদের মধ্যে মোঃ রফিক নির্যাতিতার স্বামী নেজাম উদ্দিনের ভাই। রফিকও সুইজারল্যান্ড থাকেন। সম্প্রতি তিনি দেশে আসেন। ভাইয়ের স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালান।

আমিনুল ইসলাম ইউনিট আওয়ামী লীগ নেতা। চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. খাইরুল ইসলাম বলেন তার‘তদবির’ না রাখায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন।

এদিকে সংবাদকর্মীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন নগর পুলিশ দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার ডিসি মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রবাসীর স্ত্রী ফারিয়া আলম বলেন, তাকে মারধর করে ঘরবন্দি করে রাখার ঘটনায় গত ১৪ মে চান্দগাঁও থানার মামলা হয়। সেই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রবাসীর তিন ভাই-ভাবী-ভাতিজা মিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী ও সন্তানদের ওপর হামলা করেছে।

তিনি আরও বলেন গত ৯ দিন যাবত আমরা ঘরবন্দি রয়েছি। আওয়ামী লীগ নামধারী আমিনুল ইসলাম আমার বড় মেয়ের শ্লীলতাহানি করেছে। ভাতিজি মানে নিজের মেয়ে, মেয়ে মায়ের মত সম্মানের। কিন্তু সে আমার মেয়েকে বাসার কাজের ছেলের সামনে শ্লীলতাহানি করেছে। এছাড়া দোতলার বাসা থেকে নামলে কুপিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রবাসী নেজাম উদ্দিনের মালিকানাধীন নগরীর চান্দগাঁও সানোয়ারা আবাসিকের মৌলভী পুকুরপাড় সড়কের ৭০২ নম্বর বাড়িতে তার স্ত্রীসহ দুই মেয়ে বসবাস করেন। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সেই জমির অন্য মালিক প্রবাসীর ভাই মো. রফিকের সঙ্গে বিভিন্ন সময় ঝামেলা চলছিল। এসব সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসী নেজামের ছোট ভাই নগরীর মোহরা ওয়ার্ড ‘এ’ ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ রফিকের স্ত্রী মিলে ওই প্রবাসীর বড় মেয়ের শ্লীলতাহানি করেন।

এই বিষয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর চান্দগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও রয়েছে। পরে পারিবারিক সম্পর্কের কারণে ও বিবাদিদের ভয়ে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়।

কিন্তু তাদের মধ্যে এসব বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় চলতি মাসের ৮ মে দুপুরে মামলায় অভিযুক্তরা ফের প্রবাসীর স্ত্রী, সন্তানসহ শ্যালক মো। আসিফ (৩০) ও প্রবাসীর স্ত্রীর চাচাতো বোন ফারহানা ইয়াছমিনকে (৪০) মারধর করেন।

এই ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আমিনুল ইসলাম ও চান্দগাঁও থানা মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিনসহ কয়েকজন মিলে থানায় যান। সেখানে ভিকটিমদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়েরের জন্য ওসিকে তদবির করেন। কিন্তু তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য না থাকায় মামলা নেননি ওসি মো. খাইরুল ইসলাম। মামলা না নেওয়ায় ওসিকে শাসিয়ে যান আওয়ামী নেতারা।

এইবার তাদের অনৈতিক আবদার না রাখায় সংবাদকর্মীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ ছপানো হয় বলে জানান চান্দগাঁও থানার ওসি ।

ওসি মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘ভিত্তিহীন বিষয়ে তদবির করতে এসেছিলেন নগরের মোহরা ওয়ার্ড ‘এ’ ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও চান্দগাঁও থানা মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন। তাদের আইন পরিপন্থী তদবিরে কর্ণপাত না করায় ভিত্তিহীন এক তথ্য দিয়ে তারা সংবাদকর্মীদের বিভ্রান্ত করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আমরা মামলা নিয়েছি। কিন্তু তারা সেই ঘটনার ভিকটিমের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করতে আসেন। বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য দিতে না পারায় মামলা নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছি।’

ওসির বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে যোগাযোগ করা হলে চান্দগাঁও থানা মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘জমি বিরোধের জেরে ভাইদের মধ্যে কলহ হয়েছে। এই বিষয়ে মামলা না নিয়ে দু’পক্ষকে ডেকে সমঝোতা করা যেত। কিন্তু তিনি তা না করে মামলা নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু পরে বিবাদি পক্ষ থেকে মামলা করতে চাইলে তিনি মামলা নেননি।

পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের ডিসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধরসহ ঘরের সামনে ময়লা-আবর্জনা রেখে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। এই ঘটনায় মামলা নেওয়ায় তথাকথিত ভূইফোড় লেবাসধারী রাজনীতিবিদ অপপ্রচার করে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে