ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএস ফিটনেস ক্লাব নামের একটি ব্যায়ামাগারে (জিমে) গোপনে এক গৃহবধূর ভিডিও ধারণের প্রতিবাদ করায় ওই গৃহবধূ, তার বোনসহ তিনজনকে আটক করে বেদম মারধোর করার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার পর “৯৯৯”-এ ফোন পেয়ে পুলিশ ওই ব্যায়ামাগার থেকে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ব্যায়ামাগারের পরিচালক হাবিবুল্লাহ ভূইয়াসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় শহরের মৌলভীপাড়ায় বিএস ফিটনেস ক্লাবে এই ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ব্যায়ামাগারের পরিচালক হাবিবুল্লাহ ভূইয়া (৩২), ওই ব্যায়ামাগারের ফিটনেস প্রশিক্ষক মিতু আক্তার (২৮) ও তাদের সহযোগী মোঃ সাইম (২৫)। গ্রেপ্তারকৃত হাবিবুল্লাহ ভ‚ইয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
এই ঘটনায় গত বুধবার রাতে ওই গৃহবধূর ভাসুর মাসুদুর রহমান গ্রেপ্তারকৃত তিনজনসহ চারজনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ৮/৯জনকে আসামী করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হলে আটককৃত তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ ও আহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শহরের মৌলভীপাড়ায় অবস্থিত বিএস ফিটনেস সেন্টারে মেয়েদের ব্যায়াম করার আলাদা ব্যবস্থা ও পুরুষদের যাওয়ার অনুমতি না থাকায় ওই গৃহবধূ ও তাঁর বোন গত কয়েক মাস আগে ওই ব্যায়ামাগারে ভর্তি হয়ে সেখানে নিয়মিত ব্যায়াম করে আসছিলেন।
গত কয়েকদিন ধরে ব্যায়ামাগারের ফিটনেস প্রশিক্ষক মিতু আক্তারের আচরণ তাদের কাছে সন্দেহ হয়। প্রশিক্ষক মিতু আক্তার গোপনে তাদের ভিডিও ধারণ করেছেন বলে গত দুইদিন আগে তারা নিশ্চিত হন। গত বুধবার বিকেলে ওই গৃহবধূ ও তাঁর বোন গোপনে ভিডিও ধারণের বিষয়ে প্রশিক্ষক মিতুকে জিজ্ঞেস করে।
এ নিয়ে মিতুর সাথে তাদের বাকবিতন্ডা হয়। প্রশিক্ষক মিতু আক্তার এক পর্যায়ে বিষয়টি ফোনে ব্যায়ামাগারের পরিচালক হাবিবুল্লাহ ভূইয়াকে জানান। খবর পেয়ে হাবিবুল্লাহ ভূইয়া ব্যায়ামাগারে গিয়ে মিতুকে নিয়ে গৃহবধূ ও তার বোনের কাছে যান। সেখানে গিয়ে মিতু চুলের মুঠি ধরে ওই গৃহবধূ ও তার বোনকে মারধর শুরু করেন।
খবর পেয়ে তাদেরকে বাঁচাতে শহরের উত্তর পৈরতলার সোহেল মিয়া নামের এক স্বজন ব্যায়ামাগারে যান। এক পর্যায়ে হাবিবুল্লাহ ভূইয়া ও তার সহযোগীরা লোহার রড দিয়ে সোহেলকে বেধড়ক মারধোর করে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানতে পেরে ওই গৃহবধূর পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কিন্তু ফটক তালাবদ্ধ থাকায় তাঁরা তারা ব্যায়ামাগারের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। এ সময় ব্যায়ামাগারের পাশের রাস্তায় (মৌলভীপাড়া-মধ্যপাড়া সড়ক) উৎসুক মানুষ জড়ো হন।
এক পর্যায়ে মোঃ ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি '৯৯৯' এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান এবং গৃহবধূর ভাসুর ফোন করে বিষয়টি সদর থানার পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মারধোরের শিকার দুই বোন ও আহত সোহেলকে উদ্ধার করে। এ সময় ব্যায়ামাগারের পরিচালক হাবিবুল্লাহ ভ‚ইয়া, প্রশিক্ষক মিতু আক্তার ও মোঃ সাইমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় পেছন থেকে কেউ একজন এসে হাবিবুল্লাহ ভূইয়ার পিঠে ছুািরকাঘাত করে।
আহত গৃহবধূ, তার বোন ও সোহেলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। আহত হাবিবুল্লাহ ভ‚ইয়াকেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়ার সাথে সাংবাদিকরা কথা বললে তিনি ওই গৃহবধূ ও তার বোনকে মারধোর করার কথা অস্বীকার করে বলেন, মোবাইল ফোনে আপত্তিজনক ভিডিও ধরনের বিষয়ে একজন নারীর ফোন পেয়ে তিনি ব্যায়ামাগারে যান। সেখানে যাওয়ার পথে সোহেল নামে একজন তাকে ফোন করে বকাঝকা করেন। পরে কয়েকজন লোক নিয়ে এসে ব্যায়ামাগার ভাংচুর করেন।
পরে পুলিশ এসে তাদেরকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে কেউ একজন তাকে ছুরিকাঘাত করে। এ বিষয়ে তিনি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, জিমের ঘটনায় ৪জনের নাম উল্লে¬খপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ৮/৯জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত হাবিবুল্লাহর কোমরের বামপাশের উপরে কেউ একজন ছুরিকাঘাত করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আসামীদের আসামীদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
যাযাদি/ এম