এবারও শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নওগাঁর পোরশা উপজেলার মেয়ে সেলিনা খাতুন। তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষিকা। ২০১২সালে শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন উপজেলার ২৪ নং সোমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সদা হাস্যজ্জল, চঞ্চল স্বভাবের, বন্ধুসুলভ আচরণের বিনয়ী এই শিক্ষিকা। ছাত্র জীবন শেষ না করেই শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করে শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে জয় করেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন। সেই সাথে সহকর্মী সহ অভিভাবকদের মনে বিশেষ জায়গা করে নেন অদম্য প্রতিভাবান এই শিক্ষিকা।
একই ভাবে চার বছর কাটিয়ে বিগত ২০১৭ সালে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় বসবাস করার জন্য বদলী হন একই জেলার পত্মীতলা উপজেলার শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানেও যোগদান করার পরে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সারাদিন বিদ্যালয়ে ছোট্ট শিক্ষার্থীদের সাথে মিলেমিশে আনন্দের সাথে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আর নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে পাঠদানে সহজেই কমলমতি শিশুদের মন জয় করেন। ফলে ২০২২ সালে এর স্বীকৃতি স্বরুপ উপজেলা শ্রেষ্ঠ সহকারি শিক্ষিকার সম্মাননা অর্জন করেন। তবে থেমে নেই সেলিনা। শিক্ষার্থীদের সহজতর পাঠদান কাজে লাগিয়ে অবাক করেছেন শিক্ষা বিভাগকে।
ফলে ২০২৩ সালেও দ্বিতীয় বারের মত শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকার সম্মাননা অর্জন করলেন ছেলিনা। সেলিনা জানান, তিনি শিক্ষকা হিসাবে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে আন্তরিকতার সাথে পাঠদান করে থাকেন। যাতে ছোট শিশুরা শিখতে পারে। নতুন বিদ্যালয়ে আসার পর থেকেই বিভিন্নভাবে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েব্যাস্ত সময় কাটাতেন প্রতিভাবান এই শিক্ষিকা। সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও তিনি নিজ বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমকে তুলে ধরেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে ভালোবেশে বিশেষ পাঠদান সহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যসম্পাদনের জন্য দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন নার্সারী থেকে ফুলের গাছ সংগ্রহ করে অফিস প্রাঙ্গনে শোভাবর্ধনে বৃক্ষমেলা সহ নয়নাভিরাম এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছেন তিনি। সংসার, সন্তান, নিজের ডিগ্রী অর্জনের পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে শিশুসুলভ আচরণের মাধ্যমে তাদের মনি কোঠায় আশ্রয় করে নিতে পেরেছেন বলে তিনি জানান। শুধু কি তাই? অভিভাবকদের সাথে ভাল ব্যবহার সহ সু-পরামর্শের বাণী ছড়িয়ে তাদেরকেও যেন অভিভূত করেছেন তিনি। কোন বাধা-বিপত্তিই যেন তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
সেলিনা জানান, বিভিন্ন মূহুর্তে হাসি মুখে সবার সাথে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন তিনি। সহকর্মী শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সহ প্রতিবেশী সকলের কাছে সুনামই অর্জন করেছেন তিনি। তার পাঠদান অনেকেই দেখেছেন। আর এর ফল স্বরুপ তিনি পরপর দুইবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারি শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ভবিষ্যতে আরো ভাল করবেন এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্য বজায় রাখার চেষ্ঠা করবেন বলে জানান।
প্রধান শিক্ষক জানান, কেভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও এই কঠোর পরিশ্রমী শিক্ষিকা দেখিয়েছেন অপরিসীম দূরদর্শিতা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে ওয়ার্কশীট বিতরণ, জুম ও গুগল মিট ক্লাসে নিজের ফোন থেকে অংশ গ্রহণ করানো এবং ঝুকি নিয়ে পাঠ্যবইয়ের সমস্যা সমাধানের কাজও করেছেন তিনি। এর ফলে এলাকা বাসীর সুনাম ও ভালবাসা পেয়েছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাগণ ও তাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন সভায় এই পরিশ্রমী শিক্ষিকার কথা তুলে ধরেন। উপজেলার রোল মডেল হিসেবে বর্তমানে অবস্থান করছেন তিনি। তিনি আরো জানান, ৩০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন এই শিক্ষিকা। তারপরেও Spoken English -এ বিশেষ পারদর্শীতা, Classroom language ব্যবহার ও বর্তমান Curriculumn এর Communicative English এর প্রয়োগ হিসেবে English Class এ তিনি খুব সহজ ও সাবলীলভাবে English words এবং Sentences ব্যবহার করে থাকেন। তার English Rhyme ও বাংলা ছড়া/কবিতা মূখস্থ করানোর কৌশল সত্যিই প্রশংসনীয়। গণিতের মত রসহীন বিষয়কেও তিনি অভিনবপদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে মজাদার ও আকর্ষণীয় করে তুলেছেন।
ফলে শিক্ষার্থীরা এক আনন্দঘন ও নির্ভয় পরিবেশে খুব সহজেই নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়ে পাঠ আয়ত্ব করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা ভালো করার জন্য প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে তাদের সহযগীতায় অনুশীলন খাতার ব্যবস্থা ও করেন তিনি। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২২ ও ২০২৩ পরপর দুই বারই তিনি উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। তবে তাদের প্রত্যাশা শুধু জেলা পর্যায়ে নয় বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়েও দেখতে চান বহু প্রতিভাবান এই শিক্ষিককে।
যাযাদি/ এসএম