শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে নতুন মন্ত্রীসভায় দেখতে চায় জেলাবাসী।

তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর-বিজয়নগর) আসনে (নৌকা প্রতিক) ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭২ ভোট পেয়ে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান (কাঁচি প্রতিক) পান ৬৪ হাজার ৩৭ ভোট।

র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোঃ আবদুর রউফ চৌধুরী, মাতার নাম মোসাম্মৎ হালিমা খাতুন চৌধুরী।

মোকতাদির চৌধুরী ঢাকা মাদরাসা-ই-আলীয়া থেকে ফাজিল পাস করার পর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রথম সাধারণ সম্পাদক।

তিনি ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয়ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মুজিব বাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে পাকিস্তানী বাহিনীর গুলিতে তার একটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন হলে ২১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন।

১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড সংঘটিত হলে তিনি দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ছাত্রআন্দোলন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের নেতৃত্বদান ও ৪ নবেম্বর ঢাকার রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ২ বছর কারাবরণ করেন এবং ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান।

১৯৮৩ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অফিসারদের নিয়ে গঠিত জনতার মঞ্চের অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ন ভ‚মিকা পালন করেনঅ। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের তৎকালীর সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু মৃত্যুবরণ করলে এই আসনটি শুন্য হলে উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বার, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মোকতাদির চৌধুরী এমপি নবম জাতীয় সংসদে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দশম জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন।

পর পর তিনবার সংসদ সদস্য থাকার সুবাধে র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছেন। বিশেষ করে নব-গঠিত বিজয়নগর উপজেলাকে তিনি ঢেলে সাজিয়েছেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় বেশ কিছু মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টি.এ.রোডে মৌড়াইল রেলওয়ে ওভারপাস নির্মান করে শহরের গত কয়েক যুগের নিত্যদিনের যানজট দূর করেন।

বিজয়নগরের জনগন যাতে সহজে জেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে পারে এজন্য তিনি হাওরের উপর দিয়ে তিনি প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা (শেখ হাসিনা সড়ক) নির্মান করেছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডা থেকে ভাদুঘর পর্যন্ত তিতাস নদীর পশ্চিমপাড়ে বেরিবাঁধ নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সেক্টরে অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন।

এছাড়াও তিনি মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, ভ‚মিদস্যু, টেন্ডারবাজসহ সমাজ বিরোধীদেরকে নিয়ন্ত্রন করে নির্বাচনী এলাকার জনগনের প্রসংশা কুড়িয়েছেন। এছাড়াও তিনি তৃনমূল পর্যায়ে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে সু-সংগঠিত করে গড়ে তুলেছেন।

সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বিশাল ভোটের ব্যাবধানে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মোকতাদির চৌধুরী এমপি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। টানা চতুর্থবার তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় জেলাবাসী তাকে নব-গঠিত মন্ত্রী সভায় দেখতে চায়।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভন বলেন, র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, ভ‚মিদস্যু, টেন্ডারবাজসহ সমাজ বিরোধীদেরকে নিয়ন্ত্রন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর প্রসংশা কুড়িয়েছেন। আমরা তাকে নতুন মন্ত্রী সভায় দেখতে চাই।

এ ব্যাপারে তরী বাংলাদেশ, এর আহবায়ক শামীম আহমেদ বলেন, মোকতাদির চৌধুরী এমপি সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভ‚মিদস্যু ও মাদকের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ। অসা¤প্রদায়িক চেতনার বাতিঘর ও উন্নয়নের রূপকার। তিনি জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। আমরা তাকে নতুন মন্ত্রী সভায় দেখতে চাই।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় মহিলা যুবলীগের সদস্য এমবি কানিজ বলেন, র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে নিরাপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আমরা তাকে নতুন মন্ত্রী সভায় দেখতে চাই।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, মোকতাদির চৌধুরী এমপি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি একজন অসম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতিক। আমরা তাঁকে আগামী মন্ত্রী সভায় দেখতে চাই।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মোকতাদির চৌধুরী এমপি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। স্মার্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া গঠনে আমরা তাকে নতুন মন্ত্রী সভায় দেখতে চাই। তিনি মন্ত্রী হবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে