বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
ফরিদপুরে বারোয়ারী মন্দিরের আগুন

গণপিটুনিতে দুই ভাই নিহত, আহত পাঁচ

ফরিদপুর  প্রতিনিধি
  ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৮
আপডেট  : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৬
ছবি-যায়যায়দিন

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের বারোয়ারী মন্দিরের কালী প্রতিমায় আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধদের হামলায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত আরো পাঁচ শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার প্রায় কয়েক ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ রাখা হতাহতদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হামলায় নিহত নির্মাণ শ্রমিকরা হলেন, মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার জানান, হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী গ্রামের ওই বারোয়ারি মন্দিরের কালী প্রতিমায় বৃহস্পতিবার সন্ধার পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মন্দির থেকে ২০ গজ দূরের পঞ্চপল্লী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত মুসলিম সাত শ্রমিককে সন্দেহ করে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে অবরুদ্ধ করে গণপিটুনি দেয়।

খবর পেয়ে মধুখালী থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনা স্থলে গেলে বিক্ষুব্ধরা তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ফরিদপুর জেলা সদর ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েক ঘন্টা পর অবরুদ্ধদের উদ্ধার করা হয়।। তিনি জানান, আহত অবস্থায় সাত শ্রমিককে উদ্ধার করা হলেও তাদের মধ্যে চারজনকে অচেতন ছিল। আহতদের উদ্ধার করে দুইজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রদান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মোরশেদ আলম জানান, শত শত মানুষ এই হামলায় অংশ নেয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষন করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের ছোড়া ইট পাটকেল এর আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।

পুলিশ সুপার জানান এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান পরিচিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

আহত শ্রমিক লিটন মোল্লা জানান, আগুন দেখার পর এলাকাবাসীর সাথে আমরাও নেভানোর কাজে অংশ নেই। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা শ্রমিকদের সন্দেহ করে হাত পা বেধে গণপিটুনি দেয়। বিক্ষুব্ধ বিপুলসংখ্যক মানুষ লাঠি রড ইট দিয়ে হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করে তাদরে। এসময় স্কুলটির দরজা জানালা ভাঙচুর করে তারা।

এদিকে ডুমাইন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশের পাশাপাশি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি তিন প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন বলেন, “মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি মাঠে বসেছিলাম। কিছু সময় পরে এই ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবু আমাকে ফোন দেন। বললেন, আপনি দ্রুত আসেন, এখানে মন্দিরে আগুন দিছে। কে বা কারা? বললেন, এখানে লেবাররা আগুন দিছে। তাদেরকে ধরে রাখছি।

“আমি তাৎক্ষণিকভাবে এখানে আসলাম। এসে দেখি হাজার হাজার জনতা। আমি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু দেখলাম যে পরিস্থিতি বেগতিক। এখানে আসলে প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব না।"

চেয়ারম্যান বলেন, আমি সরে গিয়ে প্রশাসনকে ফোন দিই, ইউএনওকে ফোন দেই। পরে প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে