শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কষ্ট লাঘবে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী চান ময়মনসিংহবাসী 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:২৬
কষ্ট লাঘবে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী চান ময়মনসিংহবাসী 

বিভিন্ন সরকারের সময় মন্ত্রী থাকা ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে এবার লাঙ্গলের প্রার্থীকে ভোটের বড় ব্যবধানে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কৃষক লীগ নেতা কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম। তার বিজয়ের মূল কারিগর মূলত এখান থেকে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থীতা প্রত্যাহারকারী সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ।

প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ দ্বারা উন্নয়ন বঞ্চিত এবং নানাভাবে নিগৃহিত মুক্তাগাছার মানুষ তাদের কষ্ট লাঘবে এবার আব্দুল হাই আকন্দকে নতুন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান।

এনিয়ে জোড়ালো দাবী উঠেছে মাঠ পর্যায়ের সর্বত্র। নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পর থেকেই নিজ এলাকা ছাপিয়ে জেলার সর্বত্র মানুষের মুখে মুখে এবার এই ত্যাগী নেতার মন্ত্রীত্ব পাবার বিষয়টি অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠে। ভোটের পর তাকে মন্ত্রিত্ব দেবার দাবীর বিষয়টি ব্যাপক জোড়ালো হয়ে উঠেছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-০৫ মুক্তাগাছা আসনটি মহাজোটের মারপ্যাচে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তখন প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন তখনকার এমপি নৌকার মনোনয়ন পাওয়া কেএম খালিদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে কেএম খালিদ সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

এলাকার উন্নয়ন প্রত্যাশায় বুক বাঁধে মুক্তাগাছাবাসী। কিন্তু গত ৫ বছরে তিনি চরমভাবে হতাশ করেন জনগণকে। দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন দেখাতে যেমন ব্যর্থ হন তেমনি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সব কিছু চালিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন। প্রত্যাশিত উন্নয়নের স্থলে অপ্রত্যাশিত কষ্ট পান জনগণ। নিজ দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার দ্বারা নিগৃহিত হন। এবার দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ। পরে এ আসনটি জাতীয় পার্টির সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তিকে ছেড়ে দেয়ায় দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন আব্দুল হাই আকন্দ।

কর্মী সমর্থকদের চাওয়া মতো একমাত্র মেয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী জান্নাত জানাকে সঙ্গে নিয়ে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন আব্দুল হাই আকন্দ। তখন শেখ হাসিনা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ধৈর্য্য ধরতে বলেন। সেই সাথে তিনি তার বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। এতে তার সমর্থক নেতাকর্মীরা নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পাশাপাশি আব্দুল হাই আকন্দকে হয়তো নতুন সরকারে যেকোন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে আশায় বুক বাঁধেন।

আব্দুল হাই মন্ত্রী হতে পারেন, এমন কথা ক্রমান্বয়ে এলাকায় ছাপিয়ে সারা জেলায় মানুষের মুখে মুখে চাউর হয়ে উঠে। স্কুল জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতে খড়ি পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ যোদ্ধা এবং দলের নানা দুঃসময়ে আদর্শিক অবস্থানে অটুট থেকে দলের জন্য নির্ভিক থাকা আব্দুল হাই আকন্দ দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের প্যানেলে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। বার বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তার সততা, দক্ষতা, নৈতিকতা, বলিষ্ঠতা, জনসম্পৃক্ততা এবং দলের প্রতি কমিটমেন্টের কারণে মুক্তাগাছার পাশাপাশি জেলা জুড়ে সর্বমহলে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। স্থানীয় রাজনীতিতে এখন আব্দুল হাই আকন্দ দলীয় কোন পদপদবী না থাকা সত্বেও মূখ্য ব্যক্তি। তার সমর্থনেই মূলত এবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম।

মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ ঘোষ বাপ্পী বলেন, এ অঞ্চলের রাজনীতিতে বলিষ্ঠ পুরুষ হিসেবে পরিচিত আমাদের রাজনৈতিক মুরুব্বি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দকে নেত্রী এবার নিশ্চয়ই যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। মাঠ পর্যায়ের মানুষের দাবী তাকে নতুন সরকারের মন্ত্রি করা হোক। তাকে মন্ত্রীত্বের আসনে স্থান দেয়া হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এ অঞ্চলের সকল মানুষকেই মূলত সম্মানিত করা হবে। তিনি আব্দুল হাই আকন্দকে মন্ত্রী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জোর দাবী জানান।

ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান বলেন, আব্দুল হাই আকন্দ মূলত ময়মনসিংহ জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে একজন অতি পরিচিত মুখ। ময়মনসিংহে সিংহ পুরুষ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বেঁচে নেই। এমন সময়ে তার মত ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন এবং জননন্দিত নেতাকে মন্ত্রি করা হলে সকলের জন্য মঙ্গল হবে। তার পাশাপাশি এই অঞ্চলের সকল মানুষ স্মানিত হবে। তিনি তাকে এবার পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী করার দাবী জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ বলেন, কোন কিছু পাওয়ার জন্য কখনও রাজনীতি করি না। আমার রাজনীতি মূলত জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে দেশ এবং জাতির সেবার মানসিকতা থেকে। সেখানে ব্যক্তির চাওয়া পাওয়ার কোন স্থান নেই। সারা জীবন ধরে আওয়ামী লীগের পতাকা তলে থেকে মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। বাকী জীবনটুকুও মানুষের সেবা করেই কাটাতে চাই। সেখানে নেত্রী যখন যে দায়িত্ব দেবেন কিংবা যখন যেখানে যে ধরণের নির্দেশনা দেবেন তা সততার সাথে পালনের চেষ্টা করে যাবো।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে