শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঈশ্বরদীতে প্রসূতির মৃত্যুর ৬ দিন পর মানববন্ধন, সাময়িকভাবে ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
  ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:১২
ঈশ্বরদীতে প্রসূতির মৃত্যুর ৬ দিন পর মানববন্ধন, সাময়িকভাবে ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ

ভুল চিকিৎসায় অন্তরা খাতুন (২৫) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে দাবী করে ৬ দিন পর মানববন্ধন, বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব কর্মসুচির পালনের পর ব্যক্তি মালিকানাধীন আলো জেনারেল হাসপাতাল সাময়িকভাবে বন্ধসহ তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহিদুল্লাহ দেওয়ান।

বুধবার পাবনা ঈশ্বরদী হাসপাতাল রোডস্ত আলো জেনারেল হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে।

তবে কয়েক মাস পূর্বে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে আকলিমা সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় অপারেশন থিয়েটারেই নবজাতক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে প্রসূতির অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। মৃত্যু যন্ত্রণায় ঈশ্বরদীর সাহাপুর মন্ত্রিমোড়স্ত ময়না খাতুন (২০) নামের ওই গৃহবধু এখনো ছটপট করছেন। সেই সময় ভুক্তভোগি পরিবারের পক্ষ থেকে সিভিল সার্জন ও থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই ঈশ্বরদীতে এই ধরণের ঘটনা বারবার ঘটছে বলে মানবন্ধবে অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার ফজলে রাব্বির গর্ভবতী স্ত্রী অন্তরা খাতুনকে আলো জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই সন্ধ্যায় সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তান প্রসব করেন অন্তরা। অপারেশনের পরপরই রোগী অবস্থা আশঙ্কজনক হওয়ার হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

নিহত অন্তরার স্বামী ফজলে রাব্বী ও শ্বাশুড়ি জান্নাতুন ফেরেদৌস রুনু অভিযোগ করে বলেন, অ্যানেস্থেসিয়া ভালোভাবে না করায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় এই বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি।

আলো জেনারেল হাসপাতালের স্বত্ত্বাধিকারী ডাক্তার শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, প্রসূতি অন্তরা খেঁচুনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। রোগীর পরিবার থেকে বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি। সফল সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওই গৃহবধু। অপারেশন শেষে তাকে বেডে পাঠানো হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর রোগির খিঁচুনি দেখা দেয়। তখন তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এরপর রোগীর অভিভাবকরা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়ে আলো জেনারেল হাসপাতালের সুনাম ক্ষুন্ন করতে পরিকল্পিতভাবে এসব কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, নিহত প্রসুতি অন্তরার পরিবার অভিযোগ করবে না বা মামলা করবে না মর্মে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় জানিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফন করেছেন। এখন ঈশ্বরদী থানায় অভিযোগ করেছেন। আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।

পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, নিহত প্রসূতি অন্তরার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আলো জেনারেল হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। তবে ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংলগ্ন আকলিমা সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারে ভুল অপারেশনে নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসুতির অবস্থা আশঙ্কাজনক করার সময় পাবনায় সিভিল সার্জন হিসেবে অন্যজন ছিলেন। তাই ওই ঘটনায় কোন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এখন ঈশ্বরদীর মানুষ ক্লিনিকগুলো থেকে ভাল সেবা নিবেন এই লক্ষে কাজ করা হচ্ছে।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে