শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

জলদস্যুদের কবলে পড়া টাঙ্গাইলের সাব্বিরের বাড়িতে বিষাদের ছায়া

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৪
জলদস্যুদের কবলে পড়া টাঙ্গাইলের সাব্বিরের বাড়িতে বিষাদের ছায়া

হাঁউমাঁউ করে কাঁদছেন বাবা হারুন অর রশিদ। বুক চাপড়ে কান্না আর বিলাপ করছেন মা সালেহা বেগম। ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজের ২৩ নাবিকের সঙ্গে একমাত্র ছেলে সাব্বিরের জিম্মি হওয়ার খবর শুনে বাবা-মায়ের এ অবস্থা হয়েছে। একমাত্র বোন মিতু আক্তার বিমর্ষবদনে ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন। জিম্মির খবর পেয়ে স্বজনরাও উদ্বিগ্ন। সাব্বির জলদস্যুদের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে তাদের কাছে যেন আবার ফিরে আসতে পারে। তাদের কান্না থামাতে গ্রামের লোকজন বাড়িতে এসে ভিড় করছেন। গ্রামের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে এসে শান্তনা দিচ্ছেন। তাদের একটাই দাবি সরকার যেন সাব্বির সহ সব জিম্মিদের দ্রুত মুক্ত করে আনে।

জানা যায়, ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী জাহাজের ২৩ জন নাবিকের মধ্যে রয়েছেন সাব্বির হোসেন। পিতার নাম হারুন অর রশিদ। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে। তিনি নাগরপুরের সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে থেকে এসএসসি পাস করেন। টাঙ্গাইলের কাগমারি এমএম আলী কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে পাস করে ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন।

সাব্বিরের চাচাতো ভাই আহম্মেদ হোসেন রানা জানান, সাব্বিররা এক ভাই এক বোন। তিনি অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছেন। তার বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। বোনের বিয়ে হয়েছে। সাব্বিরের বাবা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে প্যারাইলাইজড হয়ে শয্যাশায়ী। সাব্বিরের চাকরি হওয়ার পর তার মা শয্যাসায়ী স্বামীকে নিয়ে সহবপুরে তার বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। সহবতপুরের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে এখন কেউ আর থাকেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সাব্বির। তার কিছু হয়ে গেলে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে- বুড়োবুড়ির ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তিনি সাব্বিরসহ সবাইকে জিম্মি দশা থেকে দ্রুত মুক্ত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

সাব্বিরের একমাত্র বোন মিতু আক্তার জানান, তার ভাই গত সোমবার (১১ মার্চ) বিকালে ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে- ‘বিষুব রেখা অতিক্রম করলাম’। মাথা ন্যাড়া করে ছবি আপলোড করেছে। এক মাস আগে সে বাড়ি এসেছিল। একদিন বাড়িতে থেকে আবার কর্মস্থলে চলে গেছে। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকাল থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর পেয়ে সবাই আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন। তাদের বাবা-মা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন- তারা কথা বলার অবস্থায় নেই। তারা শুধু কেঁদেই চলেছেন আর বলছেন- ‘আমার ছেলেকে এনে দাও’। তার একমাত্র ভাইয়ের খারাপ কিছু হলে বাবা-মাকে বাচাঁনো যাবে না। তিনি অতি দ্রুত তার ভাই সহ সবাইকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে