শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রসূতির মৃত্যু : শ্রীপুরে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ০২ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৪৮
প্রসূতির মৃত্যু : শ্রীপুরে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ

ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ উঠা গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তায় লাইফ কেয়ার হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদা আক্তার।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরের দিকে হাসপাতাল পরিদর্শন করে তিনি এ নির্দেশ দেন।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, হাসপাতাল পরিদর্শনে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। সেখানে একজন সাধারণ নারীকে এপ্রোন পরা অবস্থায় নার্সের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যয়।

এ সময় সিভিল সার্জন তার যোগ্যতার স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণ চাইলে তা দিতে পারেননি। তবে তিনি অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শে রোগীকে ইনজেকশন দিয়ে থাকেন বলে স্বীকার করেছেন।

পরে তাকে এপ্রোন খুলতে বলা হয়। এ ছাড়া ওই হাসপাতালে যোগ্যতা ছাড়া সেম্পল কালেকশনে একজনকে নিযুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্পতি ত্রুটিপূর্ন অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠা রোগীর ফাইলে কোনো ওটি নোট, অস্ত্রোপচারের ডকুমেন্ট নেই। কেন অপারেশন করা হলো তা তার বর্ননাও পাও যায়নি। এমনকি সেখানে রোগীর ফলোআপ রিপোর্ট নেই। পরিদর্শনে এসব অনিয়ম পাওয়ায় সিভিল সার্জন হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।

তবে ভেতরে দুজন সিজারিয়ান অপোরেশনের রোগী থাকায় তাদের বুধবার সকালের মধ্যে ছাড় দিয়ে হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম সেদিন থেকে পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়ছে। পরবর্তিতে ১০ বেডের হাসপাতালের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য জনবলের স্বপক্ষে সব কাগজপত্র প্রদর্শন করতে হবে।

অপর দিকে রোগি মৃত্যুর ঘটনায় গত ১ এপ্রিল সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সভাপতি হলেন কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

এ ছাড়া একই হাসপাতালের গাইনী কনসালেটেন্ট সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন অফিসের একজন চিকিৎসক এর সদস্য। এই কমিটি তদন্ত করে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

গত রোববার গাজীপুরের শ্রীপুরে ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে ইয়াসমিন আক্তার (৩০) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। চিকিৎসক ছাড়া নার্সের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছিলেন।

এর জেরে সেদিন রাত ১১টায় হাসপাতাল ভাংচুর করেন ওই প্রসূতির স্বজনেরা। সে সময় হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান সংশ্লিষ্টরা। রাত ২টা পর্যন্ত উত্তেজিত স্বজনেরা হাসপাতালে অবস্থান করেন। পরে ওই রাতের মধ্যে প্রসূতির স্বজনদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা হয় বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করে। এর পর এ ঘটনায় প্রসূতির স্বজনরা কোথাও কোনো অভিযোগ করেনি।

এ ঘটনায় রোববার রাত ১২টায় হাসপাতালে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা।

সার্বিক বিষয়ে লাইফ কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. হাসানকে ফোন দিলে তিনি বলেন,‘ ভালো চিকিৎসক দিয়ে ওটি করা হয়েছে। এগুলো সাংবাদিকরা ঝায় ঝামেলা বানিয়েছে। সিভিল সার্জন আসছে ডাক্তারের নাম্বার চাইছে দিয়ে দিছি। আমরা হাসপাতালে এখনও আছি।

তাদের অভিযোগ, কার্ডিয়াক এরেস্টে নাকি ইন্টারনাল ব্লিডিংয়ে মারা গেছে তা তো বলতে পারবো না"। আগেও এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাংলাদেশের কোন জায়গায় নাই। ওইটা থাকবেই। পৃথিবী যতদিন থাকবে, অকারেন্স বাড়তেই থাকবে। কোন জেলায় নেই। রাজধানীতে নেই? ’

প্রসূতির স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রসূতির স্বামী আসাদুল্লার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদা আক্তার যায়যায়দিনকে বলেন," হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে আমি হতাশ। সেখানে যথেষ্ট অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা পেয়েছি। তাই ওই হাসপাতালের নতুন কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়েছে। ৪জন রোগী সেখানে ভর্তি আছে যাদের বলা হয়েছে অন্যত্র চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।

তদন্ত কমিটি হয়েছে। তারা রিপোর্ট দেওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ তিনি আরো বলেন, ইচ্ছে ছিল নবজাতককে দেখে আসব। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রসূতির স্বজনদের মোবাইলও বন্ধ থাকায় কথাও বলা সম্ভব হয়নি"।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে