মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
মাত্র ৫০০ টাকায় ইউপি সচিব পদে চাকরি

মেধা ও শ্রম দিয়ে তরুণ-তরুণী দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবে : গোপালগঞ্জের ডিসি

এস এম নজরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:২১
মেধা ও শ্রম দিয়ে তরুণ-তরুণী দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবে : গোপালগঞ্জের ডিসি

মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মাত্র ৫০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট করে ৬ জন তরুণ-তরুণী ইউপি সচিব পদে চাকরি পেয়েছে। ৭৬৩ জনের মধ্যে থেকে ৬ জনকে বাছাই করা খুবই কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার। তাই আমারা প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের যাচাই করেছি। পরবর্তিতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সেরা ৬ জনকে বেছে নিতে পেরেছি। শতখাগ স্বচ্ছভাবে কাজ করতে আমার দপ্তরের কর্মকর্তাগণ বেশ আন্তরিক ছিলেন। তাই আমি মেধাবী ও যোগ্যদের বাছাই করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করবো এই চাকুরীপ্রাপ্ত ৬ জন তরুণ-তরুণী তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে দেশ ও সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করবেন। এমনটি বলেছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম।

তিনি আরো বলেন, আজকাল সরকারি চাকরি সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দালাল বা দালালি ছাড়া যে বর্তমান সময়ে সরকারি চাকরি নামের এ সোনার হরিণটি কেউ ধরতে পারেনা তা প্রায় সবারই ধারণা। তবে এবার কোন ধরনের দালালি বা ঘুষ ছাড়া, নিজ যোগ্যতায় জেলা প্রশাসনের ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে নিয়োগ দিয়ে এ কথাটিকে মিথ্যে প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

যারা চাকরি পেয়েছেন তারা হলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাটরবাড়ি গ্রামের সজীব মন্ডল, কংশুর গ্রামের মামুন ফকির,মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের কার্তিক মন্ডল,টেংরাখোলা গ্রামের মো. ইব্রাহীম, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গুয়াধানা গ্রামের সুব্রত ভক্ত ও গোপালপুর গ্রামের লিপিকা ঘরামী। সম্প্রতি মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে এই ৬ জনকে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে মনোনীত করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি গোপালগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার নাগরিকদের কাছ থেকে ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদের বিপরীতে ৭৮৩ টি আবেদন পাওয়া যায়। আবেদন যাচাই বাছাইতে বিভিন্ন ভুলত্রুটির কারণে ২০টি আবেদন বাতিল হয়। মোট ৭৬৩ জন বৈধ আবেদনকারীকে প্রথমে ৫০ নম্বরের প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেয়া হয়। এই পরীক্ষায় ১৮৩ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তিতে এই ১৮৩ জনকে ৭০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় বসানো হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৬টি পদের বিপরীতে ৪০ জনকে রাখা হয়। সর্বশেষ ৩০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফলাফলে এক নারীসহ ৬ জনকে চাকরিতে মনোনীত করা হয় ।

চাকরিপ্রাপ্ত সুব্রত ভক্ত, মো. ইব্রাহিম খলীল ও সজীব মন্ডল বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এই ইউনিয়ন পরিষদ সচিব নিয়োগ পরীক্ষা শুধু জেলার মধ্যে নয় সারা দেশের মধ্যে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। যে তিনটি ধাপে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে তা শুধু বিসিএস পরীক্ষায় হয়ে থাকে। কোন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় বলে আমাদের জানা নেই। জেলা প্রশাসক স্যার যেহেতু স্বচ্ছতার মাধ্যমে আমাদের চাকরীতে সুযোগ সৃষ্টি করেছেন আমরাও কর্মকান্ডের মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটাবো। যাতে আমাদের কাজে দেশ ও জাতি উপকৃত হতে পারে।

চাকরিপ্রাপ্ত লিপিকা ঘরামী জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের ক্ষুদে ব্যবসায়ী রামচরন ঘরামীর ছোট সন্তান। তাকে রামচরন ঘরামী লেখাপড়া করিয়েছেন বেশ কষ্টে। ২০১৮ সালে গণিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির জন্য আবেদন করা শুরু করেন লিপিকা। ইতোপূর্বে পাঁচবার পরীক্ষার টেবিলে বসলেও কোন বারেই চাকরির কাছাকাছি যেতে পারেননি। এবার মাত্র ৫০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট জমা দিয়ে কোন প্রকার ঘুষ ছাড়াই নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেলেন এই নারী।

সে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় লেখাপড়া শিখেছি বেশ কষ্ট করে। চাকরির জন্য বড় অংকের টাকা খরচ করা আমার পরিবারের জন্য অসাধ্য ছিল। তাইতো এতোদিন চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে । সকল প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে মাত্র ৫০০ টাকা খরচ করে আমি চাকরি পেয়েছি। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার কারণে। এক একটি স্বচ্ছ নিয়োগ শুধু এক একটি পরিবার নয় একটি দেশকে বদলে দিতে পারে। দেশে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। শুধু লিপিকা ঘরামী নয় এরকম চাকরি পেয়েছেন আরো ৫ জন বেকার যুবকও। তারাও এই উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

চাকরিপ্রাপ্ত কার্তিক মন্ডল বলেন, প্রথমে আমি মা-বাবাকে ধন্যবাদ জানাই সাহস যোগানোর জন্য। এরপর জেলা প্রশাসক স্যারকে। কারণ তিনি স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন বলেই আমি মাত্র ৫০০ টাকায় চাকরিটা পেয়েছি। অনেক দপ্তরের চাকরি পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয় এই কারণে আমরা যারা মেধাবী ছিলাম তারা তাদের কাছে টিকতে পারিনি। পরীক্ষা স্বচ্ছ হলে মেধাবীরা সব সময় ভালো করবে তার প্রমাণ আমি পেয়েছি। চাকরি পেতে আমার বাড়তি কোন টাকা খরচ হয়নি। শুধুমাত্র ৫০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট জমা দিয়েছিলাম। আমি দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে চাই।

চাকরিপ্রাপ্ত মামুন ফকির বলেন, আমি একজন শারীরীক প্রতিবন্ধী। আমার পায়ে সমস্যা থাকায় হাটতে কষ্ট হয়, ক্রাসে ভর দিয়ে হাটতে হয়। আমার ও আমার পরিবারের জন্য একটি অফিসিয়াল জব খুবই দরকার ছিল। সেটা পেয়েও গেলাম স্বচ্ছ নিযোগ পরীক্ষার সুবাদে। আমি আমার মেধা, শ্রম আর সততা দিয়ে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবো।

তিনি আরো বলেন, সকল নিয়োগ পরীক্ষা যদি এভাবে স্বচ্ছ হয় তাহলে আমাদের দেশ অচিরেই সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে