সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরম যেন নিত্যসঙ্গী গাংনীবাসীর

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
  ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:০২
তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরম যেন নিত্যসঙ্গী গাংনীবাসীর

তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরম যেন নিত্যসঙ্গী হতে চলেছে মেহেরপুরের গাংনীবাসীর। টানা কয়েক দিন ধরে জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ রোব্বার বিকেল তিনটায় মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি ভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

রোব্বার বেলা চারটা পর্যন্ত শহর ও আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জনগণের চরম অস্বস্তি ভাব চোখে পড়েছে। ষোলটাকা ইউনিয়নের বানিয়াপুকুর গ্রামে বেলা দুইটার দিকে তপ্ত দুপুরে মাথায় মাথাল দিয়েভুট্টা মাড়াই করছিলেন নজরুল ইসলাম কালাম আবুছদ্দীন ও মনিরুল। পাশের জমিতে ভুট্টা কাটছেন ইমদাদ আর কাউছার।

তাদের ভাষায়, রোদির মদ্দি কাজ করতি সমেস্যা তো এট্টু হচ্চেই। কাজ না কল্লি তো আর হচ্চে না। কাজের ফাঁকে পর এট্টু জিড়িটিড়ি নিতে হচ্ছে। আমাগের হাত না নড়লিতো প্যাট চলবি না।

করিমপুর মোড়ে টং দোকানের সামনে কথা হয় কৃষক আবু বক্করের সাথে। তার ভাষায়, ‘জীবনকালে এমন গরম কখনো দেখেননি।

এ গরম তো না মনে হচ্ছে গজপ। আমরা আগে দেকিচি এইরাম রোইদ পড়েচে, কিন্তু এইরাম তাপ ছিলুনা। সেই সুমায় খালে-বিলি পানি থাকতু। অ্যাকন কুথাও পানি নেই, রোদির ঝলক পড়চে। আমাদের বয়সে বহু কিচুই দেকিচি, অ্যারাম গরম দেকিনি।’

গোপালনগর চারচারা মোড়ে বটগাছের নীচে দেখা হয় কৃষক আকরাম আলীর সাথে। তিনি জমিতে সেচ দিচ্ছেন। একটু জিড়িয়ে নিতে গাছ তলায় বসেছেন। তার ভাষায় “এমন গরম বাপের জন্মেও দেকিনি। আগে একঘন্টায় যে জমিতি পানি দেয়া হতো এখন লাগছে চারঘন্টা। সময় আর তেল দুটোই অপচয়। কয়েকদিন আগে একটার মটরও পুড়ি গিছে। ইবার ধানে লুকসান হতি পারে।

গাংনী রেজাউল চত্তরে জুতা মেরামতকারী (মুচি) ভগত দাস রোদের মধ্যে ফাঁকা জায়গাতে ছাতির নীচে কাজ করছেন। সারা দিনে মাত্র ১২০ টাকার কাজ করেছেন। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তিনি জানান, দিন পনের আগেও এত তাপ ছিল না। সেসময় ৫/৬শত টাকা হতো।

এখন লোক সমাগম নেই তাই কাজও নেই। খদ্দেরের আশায় রোদের মাওেঝও বসে থাকতে হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। তার ভাষায়, ‘আগের তাপ-গরমের সাতে অ্যাকনকার আকাশপাতাল তপাত। ঋতুর রদবদল হয়ে গিয়েচে। এই রোদি আর গরমে পারা যাচ্চে না। বয়স হয়ে গিয়েচে, অল্প পরিশ্রমেই কাহিল হয়ে যাচ্চি।

গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, আজ রোব্বার ৩২ জন পুরুষ, ৩৩ নারী, ৩৮ জন শিশু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগি রয়েছে ৩০ জন। বৈরী আবহাওয়ায় অনেকেই তৃষ্ণা মেটাতে রাস্তার পাশে বিক্রি করা শরবত কিনে খাচ্ছেন। এতে করে দেখা দিচ্ছে নানা রোগবালাই। রোগীদের অধিকাংশই জ্বর, স্বর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ডাইরিয়া রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। বিভিন্ন হাসপাতালে রোগিদের উপচে পড়া ভীড়। পা ফেলার জায়গা নেই। মেঝে ও সিঁড়িতেও রোগীরা ভর্তি রয়েছেন। অনেকেই আউটডোরে পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

গাংনী উপজেলঅ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী জানান, তাপদাহ বা বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকেই রাস্তার পাশে বা যেখানে সেখানে বিক্রি হওয়া আখের রস, শরবত, লেবুপানি খাচ্ছেন। এগুলো অস্বাস্থকর। খাওয়া যাবে না। কারণ, একই গ্লাসে একাধিক ব্যক্তি শরবত পান করছেন। এতে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসসহ সংক্রামক রোগব্যাধি ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। হালকা পাতলঅ পোশাক পরতে হবে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে