শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

জৈন্তাপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ মুহুর্তে অনেকটা জমে উঠেছে !

জৈন্তাপুর (সিলেট) থেকে
  ১৯ মে ২০২৪, ১৯:২৭
ছবি যাযাদি

আসন্ন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ মূহুর্তে অনেকটা জমে উঠেছে। তবে অঞ্চল ভিত্তিক ভোটের হিসাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসন্ন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এম লিয়াকত আলী (আনারস) প্রতীক নিয়ে তিনি অনেকটা সুবিধা জনক অবস্থানে এগিয়ে রয়েছেন।

এবার নির্বাচনে তার সাথে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোহাম্মদ আব্দুল গফফার চৌধুরী (খসরু) কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে।

২১ মে মঙ্গলবার সকাল ৮টা বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ মূহুর্তে এসে কিছুটা অঞ্চল ভিত্তিক ভোটার ও স্থানীয় জনগণের মাঝে উত্তেজনা ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে (পুরুষ) ৮ জন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। জৈন্তাপুর উপজেলায় মোট ১৭ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তবে ইতোমধ্যে ২জন চেয়ারম্যান প্রার্থী জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ (ঘোড়া প্রতীক) আলহাজ্ব হোসেইন আহমদ (মোটর সাইকেল) প্রতীক নিয়ে প্রথম দিকে গণসংযোগ চালিয়ে ছিলেন। দুই জন সরে দাড়াঁলোও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী (আনারস), যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আব্দুল গফফার চৌধুরী খসরু (কাপ-পিরিচ), ব্যবসায়ী এম ইসমাইল আলী আশিক (দোয়াত কলম), ভাইস চেয়ারম্যান পদে (পুরুষ) বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন, (মাইক), মাওলানা কবির উদ্দিন, (চশমা), সাহাদ উদ্দিন (সাদ্দাম) (টিউবওয়েল), নজরুল ইসলাম, (উড়োজাহাজা), আব্দুল খালিক (টিয়া পাখি), আব্দুল হক,(বৈদ্যুতিক বাল্ব), মাসুক উদ্দিন (তালা), শংকর দাশ (বই) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান পলিনা রহমান,(সেলাই মেশিন), সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান জয়মতি রানী, (প্রজাপতি), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সহকারি অধ্যাপক মরহুম ফয়েজ আহমদ বাবর'র সহধর্মিনী মোছা: পারভীন আক্তার (ফুটবল) ও মোছা: সুনারা বেগম (কলস)।

জৈন্তাপুর উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ,৩৪ হাজার,৬ শত ১১জন, পুরুষ ৬৯ হাজার ৯ শত ৫৭জন, মহিলা ৬৪ হাজার,৬শত ৫৩ জন।

৬টি ইউনিয়নে মোট ৪৬ টি ভোট কেন্দ্রের স্থায়ী-অস্থায়ী ৩শত ১১টি ভোট কক্ষ রয়েছে। শেষ মূহুর্তে ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় নির্বাচন অনেকটা উৎসব মূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সামনে রেখে বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে প্রার্থীদের বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, এমনকি রঙ্গিন পোস্টার সাঁটানো হয়নি। এই মুহূর্তে উপজেলার সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসব মূখর ভোটের আমেজ।

বিএনপি-জামায়াত জোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় পর্যায়ে তাদের অনেক নেতাকর্মী নির্বাচনী মাঠে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষ সক্রিয়ে ভাবে কাজ করছেন। জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঠ থেকে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ (ঘোড়া প্রতীক) সরে দাঁড়ানোর ফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী (আনারস) প্রতীক নিয়ে তিনি অনেকটা সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছেন। নির্বাচনে সহজে তিনি বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা তৈরী হয়েছে। এই তুলানায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আব্দুল গফফার চৌধুরী খসরু (কাপ-পিরিচ) তিনি একে বারে নবীন প্রার্থী, সভা-সমাবেশ গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় তিনি অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন। নমিনেশন দাখিলের মাত্র ২ দিন আগে তিনি দেশে আসেন। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী এবং দরবস্ত ইউনিয়ন থেকে একক প্রার্থী হওয়ার কারনে তিনি উল্লেখে যােগ্য সংখ্যক একটি ভোট পাবেন। তবে দরবস্ত এলাকার ভোটার, রাজনৈতিক মহল এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদের কর্মী সমর্থক নেতাকর্মীগণ ওয়াকিবাল আছেন যে, গভীর ষড়যন্ত্র করে কৌশলে নির্বাচনী মাঠ থেকে তাদের জনপ্রিয় নেতা-কে সরানো হয়েছে। কামাল আহমদ বলয়ের কর্মীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন তাদের নেতা বহুমূখি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। যদি আব্দুল গফফার চৌধুরী খসরু দরবস্ত অঞ্চলের প্রার্থী হওয়ার কারনে কামাল আহমদ বলয়ের একাংশ তার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। আইনগত ভাবে কামাল আহমদ নির্বাচনে (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে সরকারি ভাবে অফিসিয়াল তিনি এখনও চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়ে গেছেন। নাম প্রকাশ না করে কামাল আহমদের অনেক সমর্থক বলেছেন, ব্যালট-এ ঘোড়া প্রতীকে তারা ভোটারধিকার প্রয়োগ করবেন।

অনেকই ভোট দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে পারেন। অন্যদিকে এম ইসমাইল আলী আশিক তিনি চিকনাগুল ইউনিয়নের প্রার্থী হওয়ায় তিনি কিছুটা ভোট পাবেন।

অন্যদিকে বিগত ২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী (আনারস প্রতীক) তিনি নির্বাচনী মাঠে বিগত ৫ বছর থেকে জনগণের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত থাকায় নির্বাচনের মাঠে প্রথম থেকে তিনি শক্ত অবস্থান তৈরী করেন। চিকনাগুল থেকে নলজুড়ি পর্যন্ত তার বিশাল একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীগণ তার পক্ষে মাঠে সক্রিয় ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এবং ভোটের মাঠে জনগণের মূখে মূখে আনারস প্রতীকের কথা শুনা যাচ্ছে। ফলে নির্বাচনে তিনির বিজয়ী হওয়ার পথ অনেক সহজ ও সুগম হয়েছে।

২০১৯ সালের ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জৈন্তাপুরের ৬টি ইউনিয়নের কেন্দ্র ও ইউনিয়ন ভিত্তিক ভোটের ফলাফল বিশ্লেষন করে দেখা যায়, জৈন্তাপুর-নিজপাট ইউনিয়নে ২০ হাজার ৪ শত ২৭ ভোট কাস্টিং হয়েছিল।

জৈন্তাপুর-নিজপাট ইউনিয়নে এবার ৪৭ হাজার ৬ শত ১৪ জন ভোটার রয়েছেন। বিগত ২০০৯ সালে থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর দরবস্ত অঞ্চল থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছিল। একারনে ফতেপুর, চিকনাগুল-চারিকটা সহ ৫টি ইউনিয়নের ভোটারা মনে করেন অন্তত একবার পরিবর্তন হওয়ার প্রয়োজন। এমন কি দরবস্ত এলাকার সচেতন জনগণের ভাবনা ভবিষ্যতে বৃহত্তর পরিসরে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন করতে ভেতরে ভেতরে তারা নতুনত্ব ও পরিবর্তন এবং স্থানান্তরে লিয়াকত আলীর পক্ষে জনরায় দিতে পারেন।

এছাড়া নিজপাট-জৈন্তাপুর এই দুই ইউনিয়নের সর্বস্থরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হাওয়ায় কারনে অন্তত ২৫ হাজারেরর মত ভোট কাস্টিং হবে। সেই হিসাবে লিয়াকত আলী (আনারস) প্রতীকে অন্তত ২৩ হাজারের মত ভোট পাবেন।

দরবস্ত-চারিকাটা ইউনিয়নে ২০ হাজার ৫ শত ৪৯টি ভোট কাষ্টিং হয়েছিল। বর্তমানে দুই ইউনিয়নে ৪৯ হাজার ৮শত ৩৯ জন ভোটার রয়েছেন, চারিকাটা ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হাওয়া ধারনা করা যাচ্ছে এবার অন্তত দুই ইউনিয়নে ২৩ হাজারের মত ভোট কাষ্টিং হতে পারে।

দরবস্ত ইউনিয়নে ভোট সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং অব্দুল গফফার চৌধুরী খসরু একক প্রার্থী'র কারনে তিনি দরবস্তে অন্তত ১৩ হাজার এবং চারিকাটায় ৩ হাজার মত ভোট পেতে পারেন। অতীতে বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান তিনি সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন। তবে এম লিয়াকত আলী তিনি উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনে ব্যক্তিগত উদ্যােগে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন।

২০১৯ সালের নির্বাচনে ফতেপুর-চিকনাগুল ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৪৬ টি ভোট কাষ্টিং হয়েছিল। এবার দুই ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ১ শত ৮৮ জন ভোটার রয়েছেন। ধারনা করা যাচ্ছে এবার ১৬ হাজারের মত ভোট কাষ্টিং হতে পারে।

২০১৯ সালে লিয়াকত আলী দুই ইউনিয়নে ৭ হাজার ৬ ভোট পেয়ে তিনি লিড করেছিলেন। এবার প্রথম থেকে তিনি ফতেপুর-চিকনাগুল এই দুই ইউনিয়নে শক্ত অবস্থান তৈরী করায় ভোটের মাঠে খসরু অথবা ইসমাইল আলী (আশিক) তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেন নাই। যার কারনে এই দুই ইউনিয়নে এবার লিয়াকত আলী অন্তত ১১ হাজার ভোট পেয়ে তিনি অতীতের মত এবারও লিড করতে পারেন। জৈন্তাপুরের রাজনৈতিক মহল, সামাজিক নেতৃবৃন্দ, ভোটার সহ সাধারণ জনগণ মনে করেন এবং অঞ্চল ভিত্তিক ভোটের হিসাবে সকলের ধারনা ২০২৪ সালের ২১ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লিয়াকত আলী (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী থেকে অন্তত ১২/১৩ হাজার ভোট বেশি পেয়ে তিনি বিজয়ী হবেন বলে ভোটার মনে করছেন।

এদিকে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া জানিয়েছেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জৈন্তাপুরে ২১ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলায় উৎসব মূখর পরিবেশ ও শান্তিপুর্ণ ভাবে নির্বাচনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠানে উপজেলার সর্বস্থরের জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন।

জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার (ইনচার্জ) মো: তাজুল ইসলাম (পিপিএম) জানিয়েছেন,নির্বাচনে ভোট গ্রহন শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করেত মাঠে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হচ্ছে। দরবস্ত-চারিকাটা ইউনিয়ন সহ অন্যান্য এলাকার অতি ঝুকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্র গুলো ইতোমধ্যে চিহৃিত করা হয়েছে। তবে কেউ যদি ভোট কেন্দ্র দখল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে এবং প্রয়োজনে অস্র ব্যবহার করা হবে।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে