রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ঋণের টাকা পরিশোধ করতে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১৩ জুলাই ২০২৪, ২২:২৬
ঋণের টাকা পরিশোধ করতে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা
ছবি : যায়যায়দিন

ঋণের টাকা পরিশোধ করতে মুক্তিপণের দাবীতে এক ব্যবসায়ীর শিশু সন্তান মাদ্রাসার ছাত্র তামিমকে (৬) অপহরণের পর গলা টিপে হত্যা করেছে নিহতের চাচাতো ভাইসহ ওই ব্যবসায়ীর দুই শ্রমিক। এ ঘটনায় যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব—১ ও র‌্যাব—১৪ এর সদস্যরা। শনিবার র‌্যাব—১ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও পরিচালক (মিডিয়া) মাহফুজুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার পাউরিতলা গ্রামের মৃত মজনু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (২০) এবং তার সহযোগী ফুলপুর উপজেলার কুশকান্দা গ্রামের ইস্কান্দার মিয়ার ছেলে ও নিহতের চাচাতো ভাই সাগর মিয়া (২২)। গ্রেপ্তারকৃতরা নিহত তামিমের বাবার মালিকানাধীন ববিন কাটার গুদামে চাকরি করতো।

নিহতের স্বজনরা জানান, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার আমবাগ এলাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন নাজমুল হোসেন। ওই এলাকায় প্লাস্টিকের ববিন কাটার গোডাউন রয়েছে নাজমুল হোসেনের। তার শিশু সস্তান সানজিদুল ইসলাম তামিম (৬) স্থানীয় আইনুদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো। গত রবিবার (৭ জুলাই) বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় তামিম। স্বজনরা বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। শিশুটি নিখোঁজের পরদিন অপরিচিত একটি মোবাইল নম্বর থেকে অজ্ঞাত ব্যাক্তি ফোন করে তামিমকে অপহরণের কথা জানিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে তার বাবার কাছে। পরে অপহরণকারীর দেয়া তথ্যমতে স্বজনরা টাকা নিয়ে ময়মনসিংহের বিভিন্নস্থানে যায়। কিন্তু অপহরণকারীর মোবাইল বন্ধ পেয়ে ফিরে আসেন শিশুটির স্বজনরা। অপহরণের তিনদিন পর ১০ জুলাই শিশুটির অর্ধগলিত লাশ বাসার পাশের কলা বাগানের ঝোপ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

র‌্যাব—১ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও পরিচালক (মিডিয়া) মাহফুজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় জড়িত হাসান ও সাগরকে যৌথ অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার কদুরবাড়ী বাজার এবং ফুলপুর উপজেলার কুশকান্দা এলাকা হতে শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে র‌্যাব—১ ও র‌্যাব—১৪ এর সদস্যরা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা শিশু তামিমকে মুক্তিপণের দাবীতে অপহরণের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছে। শিশু তামিমের বাবার ববিন কাটার গুদামে চাকুরী করতো হাসান মিয়া ও সাগর মিয়া। ঋণগ্রস্থ হাসান ও সাগর নিজেদের ঋণ পরিশোধ ও আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হওয়ার জন্য তামিমকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৭জুলাই সন্ধ্যায় হাতি দেখানোর কথা বলে তামিমকে তার বাবার প্লাস্টিকের ববিন কাটার গুদামের সামনে থেকে কৌশলে অপহরণ করে হাসানের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে দড়ি দিয়ে হাত—পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে বাসার বাথরুমের ভিতর তাকে আটকে রেখে মুক্তিপণের বিষয়ে দুজনে পরামর্শ করে।

পরামর্শকালে তারা আশঙ্কা করে পূর্ব পরিচিত হওয়ায় মুক্তিপণের টাকা আদায় করে তামিমকে মুক্তি দিলে সে তার পরিবারকে পুরো ঘটনা জানিয়ে দিবে। সেই ভয় থেকেই ওইদিন রাত ৮টায় বাথরুমের ভেতর সাগর তামিমের পা চেপে ধরে এবং হাসান তামিমের গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ কলাবাগানের ঝোপে ফেলে রাখে। পরদিন সোমবার (০৮ জুলাই) সকালে আসামী হাসান ভিকটিমের বাবার মোবাইলে ফোন করে জানায় তার ছেলে তামিমকে অপহরণ করা হয়েছে এবং তাদের হেফাজতে আছে। তাদেরকে মুক্তিপণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দিলে তামিমকে ছেড়ে দেয়া হবে।

অপহরণকারীদের দাবীকৃত টাকা নিয়ে তাদের দেওয়া ঠিকানামতে ময়মনসিংহের বাইপাস এলাকায় যায় তামিমের স্বজনরা।

কিন্তুপুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের সঙ্গে দেখা না করে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা। দুদিন পর বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে তামিমের অর্ধগলিত লাশ তাদের ভাড়া বাসার পাশের কলা বাগানের ভিতরে একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে প্রেপ্তারকৃতরা।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে