মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা : ককটেল বিস্ফোরণ

স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৮:০৬
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা : ককটেল বিস্ফোরণ
ছবি : যায়যায়দিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে এই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন কোটা আন্দোলনকারীসহ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম রবিন আহত হয়। আহত সবার নাম জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সারাদেশে কোটা আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ১০টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন। এক পর্যায়ে কলেজের প্রধান ফটকের পাশে তাঁরা বসে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। এক পর্যায়ে সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা আফরিন কিছু মেয়েকে সাথে নিয়ে সেখানে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সরে যেতে বলেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থী ছাত্রীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, খারাপ অঙ্গভঙ্গি ও হুমকি দিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে সরে যেতে বললেও তারা সরেননি।

এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন শোভন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন। এ সময় কলেজের সামনে ও কলেজপাড়ার লেবেল ক্রসিং এলাকায় ১০/১৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটর সাইকেলে লাঠিসোটা, কাঠের টুকরা, বৈঠা নিয়ে কলেজের সামনের সড়ক, লেবেল ক্রসিং এলাকা, নিউ মৌড়াইল ও কাউতলী এলাকায় মহড়া দেন। শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা পর্যন্ত সেখানে বসে কর্মসূচি পালন করে মিছিল নিয়ে চলে যান।

দুপুর ১২টার দিকে শহরের কাউতলী এলাকা থেকে আন্দোলনকারীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি স্টেডিয়াম এলাকায় আসার পর ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের বাঁধা দেয়। এতে আন্দোলকারীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া পালটা ধাওয়া হয়। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম রবিন’সহ উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোটা হাতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়।

এ ব্যাপারে কলেজের সামনে বিক্ষোভ করা শিক্ষার্থী ফারহানা শারমিন বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ব্যানার টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দেয়াসহ তারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে অপমানিত করেছে। কারণ আমরা কোটার সংস্কারের দাবিতে এসেছি। আমার ভাই ও বোনের শরীরে থেকে যে রক্ত ঝড়েছে তার প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহদাৎ হোসেন শোভন জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আমরা আমাদের অবস্থান থেকে তাদের সহযোগিতা করেছি। তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে। তবে জামাত, বিএনপি ও শিবিরের কর্মীরা এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। দুপুরে তারা লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল হাতে রাস্তায় নামে। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তাদের থামাতে গেলে তাদের হামলায় ছাত্রলীগের দুই নেতা-কর্মী আহত হয়। তিনি আরো বলেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তা প্রতিরোধ করা হবে।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো বাঁধা দেইনি। তাঁদের কোনো দাবি থাকলে তা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দিতে বলেছি। তাদেরকে পানিসহ খাবার দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁদের হামলায় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আহত হয়েছে।

এদিকে বাদ যোহর শহরের লোকনাথ উদ্যানে (টেংকের পাড়) সারাদেশে নিহত ছাত্রলীগ নেতাদের মৃত্যুতে গায়েবী জানাযা পড়েছে ছাত্রলীগ। এতে জেলা আওয়ামীলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বিল্লাল হোসেন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছে। ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনার তদন্ত চলছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে