সাতক্ষীরার তালায় টানা পাঁচ দিন ধরে ঢাকের বোল, কাঁসরের ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনি আর পুণ্যার্থীদের সমাগমে জমজমাট হয়ে থাকা পূজামণ্ডপগুলো নীরব হয়ে পড়েছে। আজ রোববার মধ্যাহ্নের পর থেকে, প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বাঙালি হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। গত বুধবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল পাঁচদিনের এই উৎসব। এবার তালা উপজেলায় প্রায় ১৭৮টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে।
তালার অন্যতম মাঝিয়াড়া মহাশ্মান মন্দির এর পূজারি প্রাকাশ ভাট্রাচর্জ্য জানান, দশমী প‚জা ছিল ভোর ৬টা ১৩ মিনিট থেকে শুরু হয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত । এর মধ্যেই বিভিন্ন মন্দিরে দশমীর বিহিত প‚জা সম্পন্ন হয়েছে। এরপর দর্পণ বিসর্জনের ভেতর দিয়ে পাঁচ দিনের শারদীয় দূর্গাপ‚জার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। দর্পণ বিসর্জনের ভেতর দিয়েই ম‚লত দেবী দূর্গার বিসর্জন সম্পন্ন হয়।
প্রাকাশ ভাট্রাচর্জ্য বলেন, এবার দেবী এসেছেন দোলায়, গেছেন ঘোটকে। এর তাৎপর্য এ বছর মহমারী, বণ্যা, অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনার হার বাড়বে। তবে দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে শান্তি আর কল্যাণই কামনা করেছেন সকলেই।
দর্পণ বিসর্জনের পরে তালার বিভিন্ন মন্দিরে বিবাহিত নারীরা সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও তালা উপজেলার স্থায়ী মন্দিরগুলোতেই সিঁদুর খেলার আয়োজন করা হয়। তবে এ বছর তরুণীরা সিঁদুর খেলায় অংশ না নিলেও দেবীকে বিজয়ার প্রণাম জানাতে অনেক তরুণ তরুণী মন্দিরগুলোতে আসেন। তাতে বিজয়ার বিষাদের মধ্যেও মিশে থাকে আনন্দের আবহ।
তালা বাজার দূর্গ মন্দিরে সাকালে গিয়ে দেখা গেল, লাল-সাদা শাড়ি পরে শত শত গৃহিণী বরণডালা ও সিঁদুরের কৌটা নিয়ে মেতেছেন দেবীর চরণ স্পর্শ করে সঙ্গী বা উপস্থিত অন্য ভক্তদের কপালে কপালে সিঁদুর মাখিয়ে দেওয়াই।
তালা সদরের রত্না মজুমদার বলেন, আমি বরণডালা নিয়ে এসেছি আমার স্বামী একজন চাকুরীজীবি, কাজ করেন বে-সরকারী একটি সংস্থায়। স্বামীর সংসারের কল্যাণ কামনায় বরণডালা সাজিয়ে এনেছি আমদের দূর্গা মন্দিরে। তিনি জানান, বিসর্জনের পর এই সিঁদুর খেলা ম‚লত বিবাহিত নারীদের একটি মাঙ্গলিক আচার। স্বামী-সংসারের মঙ্গল কামনা করে সবাই বরণডালা সাজিয়ে বা সিঁদুরের কৌটা সঙ্গে নিয়ে আসেন। এই সিঁদুর দেবীর চরণ স্পর্শ করিয়ে কৌটায় করে সংরক্ষণ করেন। এই সিঁদুরই তাঁরা সারা বছর ব্যবহার করেন। যাঁরা বরণডালা সাজিয়ে আনেন, তাতে থাকে ধান, দ‚র্বা, বেলপাতা, কাঁচা হলুদ, কড়ি, যেকোনো ধরনের অন্তত একটি ফুল, নাড়ু আর মিষ্টি। আর সিঁদুরের কৌটা তো থাকেই। এই বরণডালা নিয়েই দেবী প্রণাম করে ঘরে ফিরবো।
তালা কেন্দ্রীয় মহা শশ্মানের সভাপতি কল্যাণ বসু বলেন, এবার তাঁরা মণ্ডপ তৈরি ও সাজসজ্জায় দেশি ও পরিবেশবান্ধব উপকরণের প্রাধান্য দিয়েছেন। প‚জায় প্রতিদিনই প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। তালা উপজেলার অধিকাশং মন্দির এর প্রতিমা কপোতাক্ষ নদের পাড়ে আনা হয়। এরপর সন্ধ্যায় বিসর্জন দেওয়া হয় কপোতক্ষ নদে।
যাযাদি/ এসএম