আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত ও শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর থেকে খোঁজ নেই আতাহারের আতাহার আলী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।নিজেকে পরিচয় দিতেন মাহবুবুল আলম হানিফের ভাগ্নে।ছিলেন ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাবেক সভাপতি। লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতেন তিনি। মন্ত্রী, পুলিশ-র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক ছবি তুলে দিতেন ফেসবুকে।
জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভাঙ্গিয়ে বর্তমানে চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার বাহিনীর অত্যাচারে ২৪ শে জুলাই গণঅভ্যাতনের আগে অতিষ্ঠ ছিল মিরপুরের মানুষ।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের তালিকাভুক্ত রাজাকার মনোয়ার হোসেন মনোর পুত্র ও রাজাকার শহর আলীর ভাই আতাহার আলী।
তার সন্ত্রাসী আতাহার বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিল স্থানীয় প্রায় এক হাজার ব্যবসায়ী। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই লাইসেন্সকৃত পিস্তল ব্যবহার করে শীর্ষ এ সন্ত্রাসী। একাধিকবার এই সন্ত্রাসীকে প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে গুলি করা হুমকি দিতে দেখা গেছে। প্রশাসনের কাছে আতাহারের বেশ কদর থাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি কেউ। আতাহার ও তার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা এলাকার সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীরা।
এর আগে মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া বাজারে আতাহার আলী নিজ নামীয় লাইসেন্সকৃত নাইন এমএম পিস্তল দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এ সময় সেখানে থাকা ভ্যানচালক রেজাউল ও হাশেম গাজী নাদের দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত জখম গুরুতর আহত করেন।
একাধিক মন্ত্রী-এমপি ও দলের শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকার আধিপত্য বিস্তার করেছে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, নারী নির্যাতন, নারী কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ক্যাডার বাহিনী তারা পুলিশ মারপিট মামলার আসামি মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী নামে এলাকায় পরিচিত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায়ও উঠে এসেছে তাদের নাম।
২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার নওয়াপাড়া বাজার কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বাজার কমিটির সদস্য ইমাম আলী ও মাসুদ কবিরাজকে লাইসেন্সকৃত পিস্তল বের করে প্রকাশ্যে গুলি করার হুমকি দেন আতাহার আলী। ক্যাডার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ওই পিস্তল হাতে বাজার এলাকায় মহড়া দেন তিনি। সে সময় পিস্তল হাতে হুমকি দেওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সীমাহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ মিরপুরের ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ীর জানান সব ব্যবসায়ীকে দোকান প্রতি মাসে চাঁদা দিতে হতো।
এর আগে, উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গোলাম মোস্তফার সাত বিঘা জমি, শিমুলিয়ার আদমের বেশ কয়েক বিঘা জমি দখল করেছেন আতাহার আলী। এক রাতের মধ্যে তার বাহিনী দিয়ে হামলা-ভাঙচুর করে ওই সকল জমি দখলে নেন তিনি। সেখানে এখন লিচু ও আম বাগান গড়ে তুলেছেন। জমি দখলের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা অনেক চেষ্টা তদবির করেও জমি ফেরত পাননি। প্রতিবাদ করে তারা এলাকা ছাড়া ও মামলার স্বীকার হয়েছেন। জমি ফেরত চাইতে গেলে শিমুলিয়া গ্রামের জাকির হোসেন মিথ্যা মামলার স্বীকার হন। পরবর্তীতে জাকির হোসেন জেল হাজতে মৃত্যুবরণ করেন। এই রকম অসংখ্য পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কে জীবন-যাপন করেছে মিরপুরের মানুষ। আবার অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন।
অপরদিকে গত বছরের ২৪ মে মিরপুর বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে আতাহার আলী তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয়। এ সময় তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেন। এসময় বাজারের ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে দেন। তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দৌরাত্ম্যর স্বীকার হয়েছেন মিরপুর পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের যোগীপুল এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ।
২০০৮ সালে মিরপুরে মির্জানগরে আবুল খায়ের কোম্পানির তামাক বাইং কোর্টে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জোরপূর্বক তামাকের রেট বাড়াতে গেলে কোম্পানির কর্মচারী এবং স্থানীয়দের গণপিটুনির শিকার হন আতাহার আলী। ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আতাহার আলী নৌকার টিকিট পেলে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলামসহ তার সমর্থকদের মারপিট করে হাসপাতালে পাঠায়। এছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডে অংশগ্রহণকারী প্রায় ২০ জন ইউপি সদস্য প্রার্থীদের বিজয়ী করার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
যাযাদি/এস