সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এলএনজি আমদানি বন্ধের দাবি

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:২১
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এলএনজি আমদানি বন্ধের দাবি
ছবি: যায়যায়দিন

জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে অন্যচিত্র ফাউন্ডেশন, ক্লিন ও বিডাব্লিউজিইডি এক গণসচেতনতামূলক সমাবেশ ও প্রচারণা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে ময়মনসিংহে। এতে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারী) ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মসূচির মূল বার্তা ছিল, এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) যে দেশের জন্য একটি জলবায়ু সংকটের ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার অন্যতম উৎস এবং এলএনজি আমদানির মধ্যে দিয়ে দেশের মানুষের উপরে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা বড় করে দেখা হচ্ছে- এ বিষয়ে।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার এলএনজি আমদানি ও ব্যবহার বাড়িয়ে এক বিপজ্জনক পথে হাঁটছে। এলএনজি কোনো পরিবর্তনকালীন সমাধান ট্রানজিসান ফুয়েল নয়, বরং এটি জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আমাদের নির্ভরতা আরও দীর্ঘায়িত করছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা এই গ্যাস বিশ্ববাজারের অস্থিরতার কারণে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।

অন্যচিত্র ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক পরিবেশ কর্মী রেবেকা সুলতানা বলেন, আমরা বিদ্যুতের দাম বাড়তে দেখছি কিন্তু আমরা কি কখনো জিজ্ঞেস করছি কেন? সরকার এলএনজির জন্য বিশাল পরিমাণ টাকা ব্যয় করছে যা নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ করা হলে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা যেত।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও ফোরাম অন ইকোলজির আহবায়ক প্রফেসর আদহাম বলেন, বেশি ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ। ফলে এলএনজি প্রকল্পগুলো কেবল পরিবেশের জন্য নয় বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং জীবিকার জন্যও হুমকিস্বরূপ।

অন্যচিত্র ফাউন্ডেশন মনে করে, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ইতোমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবের শিকার। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, বন্যা, নদীভাঙন, এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনহ্রাস এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার যদি এলএনজি এর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সৌর, বায়ু এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে মনোযোগ দেয়, তাহলে এ ধরনের জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

আস্থা প্রকল্পের যুব ফোরাম আহবায়ক মামুন মিয়া বলেন, আমরা তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যতে পরিষ্কার ও টেকসই শক্তির বাংলাদেশ দেখতে চাই। সরকার যদি এখনই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ না করে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।

পরিবেশবিদদের মতে, বাংলাদেশে সৌর ও বায়ু শক্তির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং নদীবাহিত এলাকায় বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়া, গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৌর বিদ্যুতের সম্প্রসারণ করলে দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করা যাবে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে।

প্রচারণায় অংশগ্রহণকারীরা প্রচারাভিযানে তাদের দাবি জানান, এলএনজি আমদানি ও নতুন প্রকল্প বন্ধ করতে হবে, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, বিদ্যুতের দাম কমাতে পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহার করতে হবে, জনগণের অর্থ কর্পোরেট জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানির পেছনে ব্যয় না করে, টেকসই বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। এই আন্দোলন কেবল ময়মনসিংহেই নয়, বরং সারাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির পক্ষে জনমত গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে