জরাজিরন্য টিনের ঘর। টিনগুলোতে মরচে ধরেছে, কোথাও ফুটো হয়ে গেছে। অসুস্থ মা, অন্ধ ভাই-বোনসহ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একই সাথে মিলেমিশে ছোট্ট এই টিনের ঘরে বসবাস করছেন অন্ধ রবিউল শাহ। প্রায় ৩০ বছর আগে মারা গেছে বাবা। অসুস্থ মা, স্ত্রী, সন্তান ও অন্ধ দুই ভাই-বোনকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অন্ধ রবিউল শাহ। জন্ম থেকেই অন্ধ রবিউল। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে রবিউল বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান। আট ভাই-বোনর মধ্যে দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে ও এক ভাই মারা গেছেন। সুস্থ দুই ভাই দিনমুজুরের কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আলাদা সংসার করছেন।
বর্তমান বাজার মূল্যে উপার্জন সক্ষম মানুষই যেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে অন্ধ তিন ভাই-বোনের প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে চলছে রিবিউলের ৭ সদস্যের সংসার। অভাব যেন পিছু ছাড়ছে না রবিউলের। বর্তমানে অসুস্থ মা, অন্ধ ভাই লতিফ শাহ, অন্ধ বোন শাফিয়া, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রবিউল। চলাফেরা করেন বড় ছেলে খালিদ হোসাইনের হাত ধরে।
রবিউল শাহ রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চর-ঝিকড়ী মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আত্তাব উদ্দীন শাহ এর ছেলে। রবিউলের অন্ধ ভাই লতিফ শাহ জানান, জন্মের পর থেকেই চোখে দেখেন না তিনি। অর্থাভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।
অন্ধ বোন শাফিয়া খাতুন বলেন, আমি জন্ম থেকেই চোখে দেখিনা। আমার বিয়েও হয় নাই। আগে ৫ ভাই এক সাথে থাকলেও এখন সুস্থ ২ ভাই বউ-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকে। আমি আমার অন্ধ দুই ভাইয়ের সাথেই থাকি। সরকার থেকে প্রতিবন্ধি ভাতা ছারা আর কোনো সহায়তা পাইনা। আমাদের দিন কাটছে এক মানবেতর পরিবেশের ভেতর দিয়ে। সরকার যদি আমাদের একটু সহায়তা করতো।
অন্ধ রবিউল শাহ এর স্ত্রী মর্জিনা আক্তার জানান, ২০ বছর আগে বিয়ে সময় বড় অন্ধ জানলেও জানতেন না বাকী দুই ভাই বোনের অন্ধত্বের কথা। তবে অন্ধ স্বামী, ভাসুর ও ননদকে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন জীব যুদ্ধ। অনেক কষ্ট করে একটি গোয়াল ঘর নির্মাণ করেছেন। একটি গরু বর্গা নিয়ে পালন করছেন। তাদের বাড়িতে টয়লেট ও টিউবওয়েল নাই। অন্য বাড়ি থেকে পানি টেনে এনে অন্ধদের নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হয় তার। অন্ধ ৩ ভাই বোন প্রতিবন্ধী ভাতা পান। অর্থের অভাবে ভাতাটুকু আর অনেকের সাহায্য সহযোগিতাকে আশ্রয় করে পরিবারটির সংসার চলে খুঁড়ে খুঁড়ে। অকুলে ভাসা পরিস্থিতি তাদের। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।
অন্ধ রবিউল শাহ বলেন, আমরা আট ভাই-বোন। এর মধ্যে ভালো দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তিন ভাই ভালো ছিলো এর মধ্যে এক ভাই মারা গেছে। আমাদের জাগাজমি নাই ভালো দুই ভাই কাজকাম করে খায়। আমারা তিন অন্ধ ভাই-বোনের অনুদানেই চলি।
এ সময় তিনি আরো বলেন, সরকার তাদেরকে কোনো সহায়তা করলে স্ত্রী-সন্তান তার সংসারের হাল ধরতে পারতেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম আবু দারদা বলেন, একই পরিবারে তিনজন অন্ধ বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। মানবিক দিক বিবেচনা করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে অবশ্যই তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।
যাযাদি/ এসএম