পানি সেচের আধুনিক ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি ড্রিপ ইরিগেশনের মাধ্যমে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে চলছে শুষ্ক মৌসুমের শাক-সবজি ও মৌসুমি ফলের চাষাবাদ এবং বাগানের পরিচর্যা। কম খরচে মানসম্মত ফসল উৎপাদনে কৃষকের আস্থা অর্জন করছে এ পদ্ধতি।
নিয়ন্ত্রিত এই সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে উপজেলার তিনটহরী ইউনিয়নের বড়ডলু মুসলিম পাড়ায় ৭০ শতাংশ পাহাড় টিলায় লাগানো ফলন আসা আম ও পেঁপের বাগানের পরিচর্যা করতে পারছেন কৃষক আবুল হাসেম। তিনি জানান, বেসরকারি সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় পাওয়া 'পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে ফসল চাষ প্রদর্শনী'র মাধ্যমে এই সেচ পদ্ধতি স্থাপন করেন তিনি। ফলে শুষ্ক মৌসুমে আম ও পেঁপে গাছে পানি সেচের পাশাপাশি অন্যান্য শাক-সবজি চাষও সহজ হয়েছে। এ পদ্ধতি দেখে অন্য কৃষকেরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আগ্রহীরা বলছেন, ‘সরকারি বা বেসরকারিভাবে যদি আমাদেরও ওই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়, আমরা করবো।’
কথা হয় উপজেলার যোগ্যাছোলা এলাকার ড্রাগন চাষি আবদুল মতিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘৩ বছর আগে আড়াই বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করি। তখন সেচ দিতাম শ্যালো মেশিন দিয়ে এতে অর্থ ও পানি দুই-ই অপচয় হতো। গত বছর স্থানীয় একটি এনজিওর পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতি বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে খরচ অনেক কম হচ্ছে। যতটুকু পানি প্রয়োজন; ততটুকুই পানি পাচ্ছে। আমি আশা করছি, এ বছর লাভ আরও বৃদ্ধি পাবে।’
এ পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা জমিতে ঢালাও ভাবে সেচ দেই। এতে পানি বেশি লাগে। এখন হাসেম ভাইয়ের এখানে এসে দেখছি এ পদ্ধতি ব্যবহারে পানি নষ্ট হচ্ছে না। আমাদেরও এ ধরনের পদ্ধতি দেওয়া হলে ব্যবহার করতাম।’
বেসকারি সংস্থা আইডিএফ'র সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দর্পন চাকমা বলেন, ‘কৃষকদের চাষের জন্য অনেক বেশি পানি সেচ দিতে হতো। এতে সেচ খরচ অনেক বৃদ্ধি পেতো। কৃষকেরা লাভবানও কম হতেন। কৃষকদের সেচ-চাষে খরচ যেন কম হয়, তারা যেন লাভবান হোন, সে লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সমন্বিত কৃষি ইউনিটের অর্থায়নে ও ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) কৃষি উন্নয়ন বিভাগের বাস্তবায়নে এ পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য কৃষকদের মাঝে প্রদর্শনী দেয়া হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান বলেন, 'ড্রিপ ইরিগেশন বা বিন্দু সেচ হলো নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে গাছের গোঁড়ায় ফোটা ফোটা করে ধীরে ধীরে পানি দেয়া যায়, তাতে পানি কম প্রয়োজন হয় এবং পানি সাশ্রয় হয়। এছাড়াও ফল বাগানে ড্রিপ ইরিগেশন বা ড্রপ সেচ খুবই কার্যকরী এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত একটি সেচ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে এক সাথে সেচ এবং সারও (লিকুইড আকারে) প্রদান করা যায়। এতে গাছের বৃদ্ধি, উন্নয়ন ও ফলন ভাল হয়। পাহাড়ের বিভিন্ন ফলজ বাগানে বা বড় বাগানে ড্রিপ সেট ইনস্টল করে নিলে সেচ ব্যবস্থায় বেশ সুফল পাবে চাষিরা'।
যাযাদি/ এসএম