বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

সৈয়দপুরে স্থানীয় শহীদ দিবস আজ

আবু-বিন-আজাদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
  ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:০৮
সৈয়দপুরে স্থানীয় শহীদ দিবস আজ
ছবি: সংগৃহীত

আজ ১২এপ্রিল সৈয়দপুরে স্থানীয় শহীদ দিবস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি কলংকিত প্রেক্ষাপট রচিত হয় এই দিবসটিতে। এইদিনে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এম.পি.এ) শহীদ ডাঃ জিকরুল হকসহ স্থানীয় দেড়শতাধিক বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, পেশাজীবি ও ছাত্র-যুব নেতৃবর্গকে পাকবাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে।

অবাঙালি (উর্দূভাষী) অধ্যুষিত সৈয়দপুর শহরে সারাদেশে যুদ্ধ শুরুর দু’দিন আগে ২৩মার্চ সর্বাত্মক লড়াই শুরু হয়। এরআগে স্থানীয় একটি সিনেমাহলে বাংলা ছায়াছবি ‘আপন পর’ মুক্তি পায়। এর বিরোধীতা করতে থাকে স্থানীয় অবাঙালিরা। তাদের দাবি এখানকার হলগুলোতে কেবলই উর্দূ ছবি চলবে। বাংলা সংস্কৃতি রক্ষায় সর্বস্তরের বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুললে শহরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এতে আরো ক্ষুদ্ধ হয় উর্দূভাষী ওইসব অবাঙালিরা। তারা উস্কে দিতে থাকে সৈয়দপুর সেনানিবাসে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আর্মিদের।

পাকিস্তানি বাহিনী ২৩ মার্চ সারা শহর অবরোধ করে। অবরুদ্ধ শহরের বাঙালিরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী ঘরে-ঘরে গিয়ে নেতৃবৃন্দ ও যুবকদের ধর-পাকড় শুরু করে। এই পাকড়াও কাজে সহায়তা দেয় চিহিৃত অবাঙালিরা। এদিন প্রথম প্রতিরোধ হয়। পার্শ্ববর্তী আলোকডিহি ইউনিয়নের (দিনাজপুর জেলার বর্তমান চিরিরবন্দর উপজেলার অর্ন্তগত) চেয়ারম্যান মাহাতাব বেগ অবরুদ্ধ বাঙালিদের উদ্ধারে ছুটে আসেন। সন্মুখ লড়াই বাঁধে সৈয়দপুর শহরের মিস্ত্রীপাড়া বাঁশবাড়ি এলাকায়। পাকিস্তানি বাহিনীর ভারি অস্ত্রের কাছে পরাভূত হয় বীর বাঙালি সন্তান মাহাতাব বেগ। পরেরদিন ২৪ মার্চ তখন দুপুর গড়িয়েছে। শহীদ মাহাতাব বেগের ছিন্ন মস্তক হাতে উল্লাস প্রকাশ করতে করতে অবাঙালিরা মিছিল বের করলে সৈয়দপুর শহরে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। চলতে থাকে মহল্লায়-মহল্লায় বাঙালি নিধন।

২৩মার্চ থেকে যেসকল বাঙালি নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়, তাঁদের একত্রিত করা হয় সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের সামরিক হাজত কোয়ার্টার গার্ডে। সেখানে অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়। সূত্র মতে, কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি নারায়ন প্রসাদ ইতিপূর্বে একজন বিদেশী সাংবাদিককে জানান, তাঁকে পাকবাহিনীর একজন মেজর বলেছিল-তুমি যদি তোমার মেয়ের সঙ্গে সহবাস করো, তা’হলে তোমাকে মুক্ত করে ভারতে পাঠানো হবে। পরে, অবশ্য ওই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন নারায়ন। ওই কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি ছিলেন এম.পি.এ ডাঃ জিকরুল হক, আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ শামসুল হক, ডাঃ বদিউজ্জামান, ন্যাপ নেতা ডাঃ এস.এম ইয়াকুব, দানবীর তুলশীরাম আগরওয়ালা, যমুনা প্রসাদ কেডিয়া, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালা প্রমূখ।

১২এপ্রিল একটি বিশাল সামরিক কনভয় এগুতে থাকে রংপুর শহর অভিমুখে। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে যাওয়া ওই কনভয়ে অনেকগুলো লোককে দেখা যায়। সকলের চোখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। তাঁদের নেয়া হয় রংপুর ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন নিসবেতগঞ্জ গ্রামে। বিশাল এক বধ্যভূমি। ওই বধ্যভূমিতে হত্যাযজ্ঞে অলৌলিকভাবে বেঁচে যান ছাত্রনেতা কমলা প্রসাদ। ১২এপ্রিলের হত্যাকান্ডসহ নয়’মাসের যুদ্ধে সৈয়দপুরের প্রায় আড়াইহাজার মানুষ শহীদ হন।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে