শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

চাঁপাইনবাবগঞ্জে হত্যা মামলার বাদীসহ ৪৫ জনকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলার অভিযোগ!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
  ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৫৭
চাঁপাইনবাবগঞ্জে হত্যা মামলার বাদীসহ ৪৫ জনকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলার অভিযোগ!
ছবি: যায়যায়দিন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা ও আতঙ্ক। আলোচিত পিন্টু হত্যা মামলাকে ঘিরে উঠে এসেছে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। গত ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে আহত করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স আব্দুল হাকিম পিন্টুকে, যিনি গত ২৩ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নিহতের পরিবার দাবি করে, পিন্টু নিয়মিতভাবে মাদকসম্রাট খ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপু

ও তার মাদক সিন্ডিকেটের মাদক কারবার সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করতেন। তাই টিপু ও তার নেতৃত্বাধীন মাদক সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পরদিন পিন্টুর বাবা মো. হুমায়ুন সদর থানায় টিপুসহ ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। অভিযুক্তদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক পরিচয়ের এবং দেশের সক্রিয় মাদকচক্রের সদস্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামলার পর থেকেই শুরু হয় মূল অভিযুক্তদের রক্ষার কৌশলী তৎপরতা। সাধারণ নিরীহ মানুষদের জড়িয়ে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে টিপু সিন্ডিকেট। প্রথমে টার্গেট করা হয় পিন্টুর স্ত্রী পারভীন বেগমকে। প্রাথমিকভাবে তিনি টিপুসহ সকল আসামীদের বিরুদ্ধে স্বামীর হত্যার বিচার দাবি করলেও কিছুদিন পর গা ঢাকা দিয়ে হঠাৎই নতুন স্থানীয় কিছু সাধারণ নিরীহ ব্যক্তিকে দায়ী করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। পরে টিপু-ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে গোপন আঁতাতে গিয়ে একটি মানববন্ধন করেন ও নতুন মামলা দায়ের করেন, যা পিন্টুর পিতা মামলার বাদী হুমায়ুন "সাজানো নাটক" হিসেবে আখ্যা দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২ এপ্রিল শহীদ রানা টিপুর অনুসারীরা

দলবদ্ধ হয়ে মামলা তুলে নিতে পিন্টু হত্যার বাদী হুমায়ুনের দোকানে হামলা চালায়, মারধর করে, ভাঙচুর চালায় এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়াও দোকান ঘিরে ধরে তারা ব্যাপক সন্ত্রাস চালায়। রাতেও এলাকায় একাধিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। উদ্দেশ্য ছিল মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের হুমকি দিয়ে ভীত করা এবং পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া।

৩ এপ্রিল রাতে ফের তারা একাধিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়, যা ছিল ধারাবাহিক সহিংসতার অংশ। ভুক্তভোগী পিন্টুর পিতা বাদী মো. হুমায়ুন সেদিন সদর থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, তাকে ও তার ছেলে জসিমকে মারধর, দোকান ভাংচুর, অপহরণ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়া তার দোকানে হামলা চালিয়ে মালামাল লুট করে এবং দুইজন আসামি দোকানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এই মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়, যাদের মধ্যে ১১ জন পিন্টু হত্যা মামলার আসামি। ওই অভিযোগকর তদন্ত করেন পুলিশ, পরে তদন্তে বাদীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মামলার রেকর্ড করেন।

নিহত পিন্টুর পরিবারের দায়ের করা মামলাকে প্রতিহত ও মূল ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে চরবাগডাঙ্গায় শুরু হয় এক নির্মম ও সুপরিকল্পিত নাটক। অভিযোগ ওঠেছে মঞ্চের কেন্দ্রীয় চরিত্র—আলোচিত মাদকপৃষ্ঠপোষক ও সহিংস রাজনীতির নেপথ্য শক্তি শহীদ রানা টিপু। তার ছত্রছায়ায় রচিত হয় পাল্টা মামলার কৌশল, যার উদ্দেশ্য—খুনের দায় এড়িয়ে যাওয়া, স্বাক্ষী ও নির্যাতিত পরিবারকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিশ্চুপ রাখা।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৪ এপ্রিল, চরবাগডাঙ্গা গোঠাপাড়ার বাসিন্দা পরিচয়ে মো. জিয়াবুর রহমানের নামে থানায় জমা পড়ে একটি পাল্টা ইজহার। এতে পিন্টুর বাবা হুমায়ুনসহ ৪৫ জন নিরহ মানুষের নাম দিয়ে বিস্ফোরণ ও হামলার অভিযোগ তোলা হয়। তবে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা, এমন কোনো ঘটনা বাস্তবে ঘটেনি। এবং 'দৈনিক যায়যায়দিন' পত্রিকার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য—তথাকথিত বাদী জিয়াবুর ঘটনার দিন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন এবং এবং মুঠোফোনে কথা বলার এক ফাঁকে সে বিভ্রান্ত তথ্য পরিবেশন করতে থাকে। তিনি বলেন, তার ভাই তাকে থানায় মামলা করার জন্য নিয়ে গিয়েছিল, পরে সে আবার বলে তার ভাই নাকি জেলে আছে, আবার একের পর এক রহস্যজনক কথা বলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত জিয়াবুর স্বীকার করেন—ওই ইজহারে তার স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু ওই ইজহারে তিনি স্বাক্ষর করেনি, যা প্রমাণ করে ওই ইজহারটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। জানা যায়, প্রথমে ওই ইজহারের বিষয়ে সত্যাতা না পাওয়ায় পুলিশ বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করে রাখে।

পক্ষান্তরে, হুমায়ুনের দায়ের করা মামলায় তদন্ত শুরু হয়। ওই সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ গণমাধ্যমকে জানান, বাদী হুমায়ুনকে হত্যার হুমকি ও ককটেল বিস্ফোরণের সত্যতা মিলেছে, তাই তার মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ গত ১৫ এপ্রিল নাটকীয় মোড় নেয় ঘটনাটি। যে ইজহারটি ৪ এপ্রিল জিয়াবুরের নামে জিডি হিসেবে গ্রহণ করে রাখা হয় সেটিকেই গত ১৫ এপ্রিল মামলায় রূপান্তর করা হয় বলে চাঞ্চল্য অভিযোগ ওঠে এসেছে। সেই মামলার বাদীর নাম জিয়াবুর থেকে হয়ে যায়—সাকিল আহমদ। যদিও ইজহারের ভাষা, ঘটনা ও অভিযুক্ত তালিকা একদম একই, শুধু বাদীর নাম বদলে দেওয়া হয়। এই রহস্যজনক পরিবর্তন ঘিরে জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়—তবে কি এটি পূর্বপরিকল্পিত একটি সাজানো নাটক? যার একমাত্র উদ্দেশ্য—আসল খুনীদের আড়াল করা এবং আইনকে বিভ্রান্ত করা?

ইতোমধ্যে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর আলীকে। অথচ মামলা তুলে নিতে বাদীর দোকানে হামলা, মারধর, ভাঙচুর, এবং বোমা বিস্ফোরণ মামলার বাদীকে প্রাণনাশের ঘটনায় পিন্টুর পিতা হুমায়ুন যে মামলা করেছেন, তার তদন্তে নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি, নেই গ্রেফতার অভিযান। এমনকি আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর পিন্টু হত্যা মামলাটিও রয়ে গেছে থমকে—গ্রেপ্তার মাত্র ৩ জন তারমধ্যে ২ জন জামিনে মুক্ত হয়েছে, চালানো হয় না কোনো জোরালো অভিযান। পুলিশের এই দ্বিমুখী আচরণ ঘিরে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে গভীর ক্ষোভ ও গুঞ্জন। স্থানীয়দের অভিযোগ, হত্যার শিকার পিন্টুর পরিবারকেই এখন বানানো হচ্ছে অপরাধী। বাদীপক্ষকে চুপ করিয়ে দিতে এক সংঘবদ্ধ চক্র মিথ্যা মামলা, পাল্টা হামলা-মামলা, অভিযোগ ও ভয়ভীতির মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে নিরব দুর্বৃত্তায়ন, যাতে আসল খুনীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। জনমনে প্রশ্ন জাগছে—এই পাল্টা মামলা, নাটকীয় বাদী পরিবর্তন, একতরফা গ্রেপ্তার আর তদন্তে কালক্ষেপণ—সবই কি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ নয়? পিন্টুর মতো একজন মানুষের নির্মম হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করতে, স্বাক্ষীদের মুখ বন্ধ রাখতে এবং খুনীদের রক্ষায় কি চূড়ান্তভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে আইনকে ছলনার হাতিয়ার হিসেবে?

পিন্টুর পরিবার ও চরবাগডাঙ্গার অসহায় সাধারণ মানুষের অভিযোগ—বিচার থেকে বাঁচতে হত্যা মামলার আসামিপক্ষ এখন সরাসরি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বাদীপক্ষকে দমিয়ে রাখতে একদিকে সন্ত্রাসী হামলা, প্রাণনাশের হুমকি, ভাঙচুর ও হয়রানি চলছে; অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালানো হচ্ছে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর ক্যাম্পেইন। এই বহুমুখী আক্রমণের পেছনে একটিই লক্ষ্য—বিচারপ্রক্রিয়াকে দিশাহীন করে তোলা এবং খুনীদের নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া।

তদন্ত ও বিচার না এগোনোয় হতাশা আর ক্ষোভ ঘনিয়ে উঠেছে পিন্টুর পরিবারে। তার পরিবারের ভাষ্য, “আমরা দুইটি মামলা করেছি সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে, কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। বরং উল্টো আমাদেরই নামে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি চালাচ্ছে। যারা নিরীহ, তারাই আজ হুলিয়া মাথায় ঘুরছে। আমাদের পরিবারের সদস্যদের ভয় পাইয়ে দিয়ে, এলাকার সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে তারা বিচারপ্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দিতে চায়।”

পিন্টুর পিতা মো. হুমায়ুন বলেন, “আমরা নির্যাতনের শিকার হয়ে মামলা করেছি, এখন সে মামলার বিচার তো দূরের কথা—বরং খুনীদের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় আমাদের ওপর হামলা, হুমকি, এমনকি বোমাবাজি চলছে। সর্বশেষ, মিথ্যা মামলায় আমাকে ও আমার ছেলেসহ নিরপরাধ ৪৫ জনকে আসামি করেছে। ইতোমধ্যে ওই মিথ্যা মামলায় ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমরা আর কতবার নিপীড়িত হবো? দেশে কি ন্যায়বিচার বলে কিছু আছে? স্বৈরাচার তো গেল, ভেবেছিলাম দেশ বদলাবে, কিন্তু দিন দিন তো অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।”

পিন্টুর বড় বোন জান্নাতুন খাতুন লাবনী বলেন, “আমরা ভীষণ হতাশ। প্রায় তিন মাসেও ভাইয়ের খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমাদের পরিবারের উপর একের পর এক হামলা হয়েছে, বাবা ও ভাইকে হামলা-মামলা দিয়ে তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ পুলিশ নীরব। উল্টো আমাদের নামে সাজানো মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার শুরু করেছে। এছাড়াও খুনিরা আমাদের কথাবার্তা এডিট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে, সম্মানহানি করছে—কোনো নিরাপত্তা নেই আমাদের।”

প্রত্যক্ষদর্শী চাকপাড়ার মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, “হাটে নিজের চোখে দেখেছি—টিপুর লোকজন কীভাবে পিন্টুর বাবা ও ভাইকে ঘিরে ধরে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে, তারা বলেছে ‘মামলা তুলে নাও।’ পুরো পরিবেশ ছিলো এক ভয়াবহ সন্ত্রাসের মতো। অথচ এখন শুনছি, উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই মামলা! এটা শুনে আমরা হতবাক।”

চরবাগডাঙ্গা ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “যারা সত্যিকার ভুক্তভোগী, তাদের মামলায় গ্রেপ্তার নেই, বরং সাজানো মামলায় পুলিশ ওমর আলী চেয়ারম্যানকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। যেখানে বাদী একবার জিয়াবুর,পরে হয়ে গেল সাকিল—এটা যে নাটক, তা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এটা শুধু মিথ্যা মামলা না, নির্লজ্জতার নিদর্শন।”

তিনি আরও বলেন, “আজ যখন সারা দেশে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, তখন উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদকচক্রের নিয়ন্ত্রক শাহীদ রানা টিপু—চারটি খুনের প্রধান আসামি ও একাধিক মামলার আসামি—সে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই দৃশ্য কি মানুষ দেখতে চেয়েছিলো? চরবাগডাঙ্গার প্রতিটি মানুষ আজ এই প্রশ্ন করছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক প্রবীন রাজনৈতিক নেতা বলেন, “শাহীদ রানা টিপু ও তার মাদক সিন্ডিকেটকে রক্ষায় জেলা পর্যায়ে একটি প্রভাবশালী চক্র সক্রিয়, যেখানে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার কিছু রাজনীতিবিদ টিপুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাকে আড়াল করছে। শুধু রাজনৈতিক নয়, জেলা পুলিশের ভেতরেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা এই অপচক্রে জড়িত। তাদের মদদেই সাজানো মামলা ও নাটকের মঞ্চায়ন সম্ভব হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই চক্র একদিকে খুনিদের রক্ষা করছে, অন্যদিকে নির্যাতিত পরিবারকে চুপ করিয়ে দিতে চাপ দিচ্ছে। টিপুর হাতে যেন এক যাদুর ছড়ি—যা দিয়ে সে প্রশাসন আর আইন-আদালতকেও নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করছে।”

এসব গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মামলার প্রধান আসামি শাহীদ রানা টিপুসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে প্রত্যেকের ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে এবং গ্রেপ্তার এড়াতেই অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলছেন—যেখানে একজন নাগরিকের একটি সাধারণ অভিযোগেও পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে, সেখানে এই আলোচিত হত্যা মামলার প্রধান আসামিরা কীভাবে দিনের পর দিন আত্মগোপনে থেকে যাচ্ছে?

এ ধরনের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র এখন পুরো জেলার আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সাধারণ জনমনে এখন একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে—এই দেশে কি তবে অপরাধীদের জন্যই সব দরজা খোলা, আর বিচার চাইলে মিলবে শুধু হুমকি, হামলা ও হয়রানি?

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, “এটি জিডি হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল কি না, তা আমার জানা নেই। আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে মামলাটি রেকর্ড করেছি। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল হাই বলেন, “আমি মামলাটি রেকর্ড হওয়ার আগে এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পর ওসি আমাকে

তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি তদন্ত করে প্রকৃত চার্জশিট দাখিল করব।”

পিন্টু হত্যা মামলার বিষয়ে (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, “পিন্টুর বাবা হুমায়নের করা মামলায় আসামিদের গ্রেফতারের কাজ চলছে এবং আমরা আশা করছি, দ্রুত সকল আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।”

চরবাগডাঙ্গার সাধারণ মানুষ, নিহত পিন্টুর শোকাহত পরিবার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একবাক্যে জোর দাবি তুলেছেন—এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা শাহীদ রানা টিপু ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে চরবাগডাঙ্গা আবারও রক্তাক্ত হতে পারে—এমন আশঙ্কা এখন এলাকা জুড়ে ভীষণভাবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে