বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

গোদাগাড়ীর খাদ্য কর্মকর্তা অফিসে আসে -যায় ইচ্ছেমত! 

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  ১৪ মে ২০২৫, ১৫:০৬
গোদাগাড়ীর খাদ্য কর্মকর্তা অফিসে আসে -যায় ইচ্ছেমত! 
ছবি: যায়যায়দিন

সরকারি বিধি-নিষেধ ও সময়ানুবর্তিতার প্রতি চোখ রাঙাচ্ছেন গোদাগাড়ী উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলাম। সরকারের কড়া নির্দেশনার পরেও তিনি অফিসে আসেন নিজের ইচ্ছেমতো, আবার বের হয়ে যান যখন মন চায়। তার এই স্বেচ্ছাচারী কার্যক্রমে নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকাল ৯টায় অফিসে উপস্থিত থাকা এবং অন্তত সকাল ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিসে অবস্থানের বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম শেষে অফিসে ফিরে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু গোদাগাড়ীর এই কর্মকর্তা এসব নিয়ম যেন কাগুজে নির্দেশ বলেই মনে করেন।

1

বারবার খালি অফিস, তালাবদ্ধ কক্ষ

গত ৩০ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। আবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে গিয়েও তার কক্ষ তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। ১৩ মে (মঙ্গলবার) বিকেল ৪টার দৃশ্য ছিল একইরকম-অফিস বন্ধ, কর্মকর্তা অনুপস্থিত। নৈশ প্রহরী মাসুদ জানান, “স্যার ছিলেন, চলে গেছেন।” ছবি তুলতে চাইলে তিনি পরদিন সকালে আসার অনুরোধ করেন।

১৪ মে (বুধবার) সকাল ৯টায় গিয়েও একই অবস্থা-তালাবদ্ধ কক্ষ, অনুপস্থিত কর্মকর্তা। অফিস সহায়ক মো. বাবু তখন অফিসের বারান্দা ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। প্রশ্ন করলে তিনি জানান, “স্যার এখনও আসেননি, তবে চলে আসবেন।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, শফিকুল ইসলাম দেরিতে অফিসে আসেন এবং দুপুর ৩টার আগেই বাসায় ফিরে যান। একমাত্র অফিস সহায়ককেই নিয়মিত অফিস খোলা ও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

খালি শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কক্ষ নয়

শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রক নয়, পাশেই খাদ্য পরিদর্শক জাকির হোসেন প্রিন্সের কক্ষটিও দিনের অধিকাংশ সময় তালাবদ্ধ থাকে। এতে করে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রশাসনিক দায় এড়ানো নয়

খাদ্য নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলামকে ৩০ এপ্রিল, ১৩ মে এবং ১৪ মে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে ১৩ মে বিকেলে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “তাকে তো আমি কম বকা দিই না, সে একটু মুরুব্বি হয়েছে।” পাশেই বসে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একেএম মমিনুল ইসলাম তখন খাদ্য কর্মকর্তাকে ফোন দেন এবং জানান, তিনি বাড়িতে চলে গেছেন। ইউএনও এসময় ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম দ্রুত শুরুর জন্যও নির্দেশ দেন।

নিয়ম ভাঙার দায় কার?

সরকারি কর্মকর্তা হয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায় এড়ানো যায় না। মাঠপর্যায়ের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও সেবা নিশ্চিত করার যে উদ্দেশ্যে সরকার নির্দেশনা জারি করেছে, তা যদি দায়িত্বশীলদের উদাসীনতায় ভেস্তে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে শুধু।

উপজেলার সাধারণ মানুষ ও সেবা প্রত্যাশীরা চান-অফিসে নিয়মিত উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করুন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নয়তো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া বিকল্প থাকবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে