শরীয়তপুরের জাজিরায় নৌ-ঘাটে নৌ-যান নোঙর করা নিয়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। আগে প্রমত্তা পদ্মার নৌ-পথে যাতায়াতকারী দূরপাল্লার বাল্কহেডসহ বিভিন্ন নৌযান নিরাপত্তা, বাজার-সদাই ও জ্বালানি সংগ্রহসহ বিভিন্ন সুবিধা বিবেচনায় নোঙর করে রাত্রীযাপন করত।
সম্প্রতি সাত্তার মাদবর ও মঙ্গল মাঝীরঘাট এলাকায় অবস্থিত জিরো পয়েন্ট এলাকায় স্থানীয়দের একটি পক্ষ অপর একটি পক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলে।
তারা নৌ-পুলিশকে চাপ প্রয়োগ করে বাল্কহেড ভিড়তে দিচ্ছে না স্থানীয় বড়ো একটি বাজার ও পদ্মার ঘাট সংলগ্ন নিরাপদ এই জায়গাটিতে।
যার ফলে, ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে এসব নৌযান শ্রমিকদের।সরেজমিনে গিয়ে সেখানে থাকা এমভি ছৈয়াল-১ বাল্কহেডের কালুসহ কয়েকটি নৌযান শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাশেই নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের অধীনে থাকা মাঝীরঘাট ফাঁড়ি ও বড়ো একটি বাজার।
ফলে নিরাপত্তা, তেল সংগ্রহ ও বাজার করাসহ বিভিন্ন সুবিধা বিবেচনায় দীর্ঘদিন ধরে তারা এই এলাকাটিতে তাদের নৌযান নোঙর করে রেখে রাত্রী যাপন করে আসছেন।
এর ফলে, বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর অপরাধের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েই প্রচন্ড আতঙ্কে এসব নৌযান শ্রমিকদের পারি দিতে হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মানদীর জাজিরা পয়েন্টের এই এলাকাটি। বিভিন্ন সময় ঘটছে নানা রকম দুর্ঘটনা। ইতোপূর্বে বহুবার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটেছে।
চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলা স্থানীয় মঙ্গল মাদবরের বক্তব্য অনুযায়ী, এখানে প্রতিনিয়ত বাল্কহেড ভিড়িয়ে রেখে নদীর পাড়ের ক্ষতি করার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে চাঁদাবাজি করছে একটি চক্র। তাই তারা এর বিরোধিতা করে চলেছেন। এমনকি চাঁদাবাজিতে নৌ-পুলিশের সহায়তার অভিযোগ তুললেও এর স্বপক্ষে কোন প্রকার প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি তারা।
অন্যদিকে অভিযুক্ত কয়েকজনের বক্তব্য হচ্ছে, তাদের বাড়ি জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি হওয়ায় বাল্কহেডের লোকজন তাদের তাদের প্রয়োজনীয় বাজার-সদাইসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র আনতে দেয়। এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করায় তারা পারিশ্রমিক হিসেবে স্বেচ্ছায় কিছু টাকা-পয়সা দেয়। কয়েকজন অসহায়-গরীব মানুষ তা দিয়েই নিজেদের সংসার চালান।
কিন্তু কিছু লোকজন তাদের থেকেই নিয়মিত চাঁদা দাবি করে চলেছে। তারা তা না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে বাল্কহেডগুলোকে এখানে ভিড়তে দিচ্ছে না।
মাঝীরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) ইন্সপেক্টর সৈয়দ মোশারফ হোসেন বাল্কহেড সরিয়ে দিলে নৌ-যান শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বাল্কহেড বা বিভিন্ন নৌ-যান এখানে নোঙর করা নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই।
তবে, এটি নিয়ে স্থানীয়ভাবে কিছু ঝামেলা হওয়ায় আমরা কয়েকদিন তাদের সরিয়ে দিয়েছি।
আমাদের পক্ষ থেকে বা আমাদের ইন্ধনে টাকা-পয়সা নেওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন। এই ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পেলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরি রায় জানান, পদ্মাসেতু থেকে ঘাটের দিকে এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত নৌ-যান না রাখার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে চিঠি পাওয়ায় আপাতত নির্দিষ্ট এক কিলোমিটার জায়গায় রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে, নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়াদি বিবেচনায় তাদের এখানে থাকার বিষয়টি আমাদের জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।