মেহেরপুরের গাংনীতে মহাম্মদপুর গ্রামে একটি বাড়িতে সারাদিন পাহারা দেয়া হয়, যেন কেউ গোয়ালে ঢুকতে না পারে। যে ষাড় দেখার জন্য উৎসুক মানুষের এত আগ্রহ, সেই ষাড় কেন লুকিয়ে রাখা হয়?
কালো ষাড়টিকে আদর করে নাম রাখা হয়েছে কালো মানিক। যে নাম ধরে ডাকলেই সাড়া দেয় বিশালদেহী এই অবলা প্রাণি। সন্তানের মতই পরম যত্নে লালন-পালন করা ষাড়টির উপর পড়তে পারে কুনজর।
সেই ভয়েই লোক চক্ষুর আড়াল করে রাখেন তার মালিক। বলছিলাম মেহেরপুরের মহাম্মদপুর গ্রামের আলোচিত কোরবানির ষাড় কালো মানিকের কথা।
জানা গেছে, মহাম্মদপুর গ্রামের সাইকেল মেকার সাহারুল ইসলাম বড় ষাড় পালনের স্বপ্ন নিয়ে ৪ লাখ টাকা দিয়ে কিনেন ফ্রিজিয়ান এই কালো গরুটি। কয়েক বছর ধরে পালন করছিন ফ্রিজিয়ান কাল ষাড়।
প্রতিদিন যার খাবারের তালিকায় থাকে ভূষি, গমের ছাল, ডাল, ভুট্টা, ঘাস ও খড় বিচুলি। নিয়ম করেই গোসল করানো হয় দুইবেলা।
রাতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে দেওয়া হয় শান্তিতে ঘুমানোর জন্য। গরম থেকে রক্ষা পেতে ২৪ ঘন্টাই চালানো হয় ফ্যান। পরিবারের সব সদস্যই কালো মানিকের দারুণ ভক্ত।
মানুষ আর পশুর মধ্যে যে আত্মিক সম্পর্ক হয় তার দৃষ্টান্ত এই পরিবারটি। কিন্তু কোরবানি সামনে তাই ছাড়তে হবে মায়া। ছেড়ে দিতে হবে কালো মানিককে।
যেন বিদায় বিষাদের কালো ছায়া উঁকি দিচ্ছে সাহারুলের স্ত্রীর মনে।
সাহারুলের স্ত্রী বিলকিস খাতুন জানান, এলাকার সবচেয়ে বড় ষাড় পালনের স্বপ্ন নিয়ে বছর তিনেক আগে ৪ লাখ টাকা দেয়ে কিনেন ফ্রিজিয়ান এই কালো গরুটি। ভালো ভালো খাবার খাওয়াতে হয়।
দেশীয় প্রযুক্তিতে এই গরুটি পালন করা হচ্ছে। কোরবানির বাজারে বিক্রি জন্য দাম হাকাচ্ছেন ২৫ লাখ টাকা। এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় এই ষাড়টি অন্যদেরকে গরু পালনে উৎসাহিত করছে বলে জানালেন বিলকিস।
সাহারুলের প্রতিবেশি লালন জানান, তার বাড়িতে একটা বড় গরু আছে অনেকেই জানেন কিন্তু কেউ দেখতে পারে না। সবার চোখের আড়ালে রাখা হয় তাকে।
কুসংস্কার রয়েছে, ভাল কিছু দেখলে অনেক সময় নাকি চোখ লাগে। গরুর স্বাস্থ্য নষ্ট হয়। এই ভয়ে সাহারুল তার গরুটিকে কারো দেখতে দেন না। তবে সাংবাদিকদের কল্যাণে তা দেখার সুযোগ হলো।
প্রতি বছর ইদুল আযহা স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম হয়ে দেখা দেয় গরু পালনকারীদের কাছে। আকার, আকৃতি ও নানা রংয়ের একেকটি গরু একেকটি পরিবারের এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। কোরবানির পশু হাটে কাঙ্খিত দামে বিক্রির মাধ্যমে পশু পালনের এই বিপ্লব চলমান থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালিব আলীর।