মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দৌলতপুরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মামলায় অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ২০ মে ২০২৫, ১৩:০২
দৌলতপুরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মামলায় অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার
অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান । ছবি: যায়যায়দিন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ফিলিপনগর-মরিচা কলেজের অফিস কক্ষের তালা ভেঙে ভাঙচুর, লুটপাট ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান মাসুমকে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান ও তার ছোট ভাই ইউনুস আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার ১৯ মে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকার তার বাসা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে দৌলতপুর থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা।

1

গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল মান্নান (৫৮) ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার মৃত ইসমাইল সরদারের ছেলে। অপর আসামি ইউনুস আলী (৪০) আব্দুল মান্নানের ছোটভাই। আব্দুল মান্নান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ মামলার পলাতক আসামি মেহেদী (৩৩) ফিলিপনগর গ্রামের একরেজ প্রামানিকের ছেলে।

এর আগে গত ১৪ মে সকাল ১০টার দিকে ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রি কলেজে অস্ত্রসহ মান্নান ও তার লোকজন প্রবেশ করেন। এ সময় কলেজের অফিসকক্ষের তালা ভেঙে ভাঙচুর, ল্যাপটপ ও টাকা লুটপাট করেন। তারা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান মাসুমকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় গত শুক্রবার ১৭ মে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান মাসুম বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া আরও সাত-আটজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

ভুক্তভোগী রেজাউর রহমান মাসুম ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি দৌলতপুর উপজেলার হিসনাপাড়া এলাকার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে, জাতীয়তাবাদী যুবদলের দৌলতপুর উপজেলা শাখার সদস্য সচিব।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর আব্দুল মান্নান ও তার লোকজন অস্ত্রসহ কলেজে প্রবেশ করেন এবং অফিস কক্ষের তালা ভেঙে ল্যাপটপ, নথিপত্র ও টাকা লুট করে নিয়ে যান। এ সময় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।’ আব্দুল মান্নান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী সহ সকল অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

মামলার বাদী রেজাউর রহমান মাসুম এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘আব্দুল মান্নান ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী ও গণহত্যার পৃষ্ঠপোষক হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি কলেজের ছাত্র ও স্থানীয় লোকজনদের তোপের মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর এলাকাবাসী, শিক্ষক কর্মচারী ও কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দ্বায়িত্বভার অর্পণ করেন।

আমি কলেজের দ্বায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে আসামি আব্দুল মান্নান বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং আমাকে খুন জখম করার উপযুক্ত সুযোগ খুঁজতে থাকেন। আসামি আমাকে হুমকি দেওয়ায় ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।’

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ‘গত ১৪ মে সকাল ১০টার দিকে আমি নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে কলেজের উদ্দেশে রওনা হই। দৌলতপুর থানাধীন ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রি কলেজের ভিতর ঢুকলে মান্নানসহ সাত-আটজন আসামি পরস্পর যোগসাজশ করে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র নিয়ে বেআইনিভাবে আমার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। আসামি আব্দুল মান্নানের হুকুমে সব আসামিরা আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কলেজের একটি শ্রেণিকক্ষে আটক রাখে।

পরে তারা আমার অফিস কক্ষের তালা ভেঙে আমার ব্যক্তিগত একটি ল্যাপটপ, টেবিলের ড্রয়ারে রক্ষিত নগদ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা, রেজুলেশন বহি, শিক্ষক/শিক্ষিকা হাজিরা বহি সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দৌলতপুর থানার ওসি নাজমুল হুদা বলেন, ‘ফিলিপনগর-মরিচা ডিগ্রি কলেজে ভাঙচুর, নথিপত্র লুট এবং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হত্যার হুমকির অভিযোগে আব্দুল মান্নানসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে