খুলনা মহানগরীর খালিশপুর ছাত্রদলের সভাপতি হিসাবে আবু সালেহ শিমুলকে দেখতে চায় নগরবাসী। সাবেক আহবায়ক সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজ, ছাত্রদল খুলনা মহানগর।
তিনি রাত দিন এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন তরুণ এই নেতা, তিনি বলেন, শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। শিক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মেধার বিকাশ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তৈরী করে। ছাত্র ও ছাত্র রাজনীতি একে অপরের সম্পুরক। ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও গণতান্ত্রিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণই ছাত্র রাজনীতি যা তরুনদের দেশপ্রেম ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চার সাথে সাথে নেতৃত্বের মনোভাব তৈরী করে।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সস্তান। ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদ ও বিপদে মানুষের পাশে দাড়ানোর অভ্যাস আমাকে ছাত্র রাজনীতির পথে চলতে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। পারিবারিকভাবে আমার মেজো মামা (১০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার শেখ আনিসুর রহমান মুকুল) কে দেখে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ তৈরী হয় এবং মেজো মামার রাজনৈতিক আদর্শ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউর রহমানের প্রতি ভালোবাসার জন্ম হয়। আমি ২০১২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের পর আমার আইডল, তৎকালীন খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুবেল ভাইয়ের মাধ্যমে রকিবুল ইসলাম বকুল ভাইয়ের সান্নিধ্যে আসার পর সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করি।
ছাত্রদলে যোগদানের পর হতেই শুরু হয় হামলা, মামলা আর অত্যাচার। ২০১৩ সালে ১০ নং ওয়ার্ডের কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে দড়ি দিয়ে বেধে মারধোর করে কতিপয় যুবলীগের ১০ নং ওয়ার্ডের আহবায়ক ওরফে সন্ত্রাসীরা।
২০১৪ সালে দৌলতপুর দিবা নৈশ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে সহিংসতার শিকার হই এবং ১ম মামলাজনিত কারণে আমার জীবনের মূল্যবান একটি বছর নষ্ট হয়। পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়ে পরের বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি।
এরপর ২০১৪ সালে একাধিকবার পুলিশি অভিযান, হামলা ও অত্যাচারের শিকার হই। ২০১৬ সালে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হবার অপরাধে আমার বাড়িতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করে এবং আমাকে বাড়িতে না পেয়ে আমার বড় ভাই এম হাসিব পলাশকে নিজ বাড়ির সামনে হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
একদিন সকালে ফজরের নামাজের সময় অভিযানের নাম দিয়ে ঘুম থেকে তুলে আমার মায়ের সামনে থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় ১০ নং ওয়ার্ড যুবলীগের আহবায়ক। ছাত্রদল করার অপরাধে ২০১৬, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে আমাদের বাড়ি ভাঙ্চুর করা হয়।২০১৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সম্মিলিত হামলায় বাড়ি ভাঙ্গচুরের সাথে ৭/৮ রাউন্ড গুলি চালানো হয়।
আর আমাকে বাসায় না পেয়ে গালি-গালাজ করে চাঁদা দাবি করে। তারপরও আমাকে দমাতে পারেনি, পারেনি লক্ষ্যচ্যূত করতে। আমি শহীদ জিয়ার আদর্শকে বুকে ধারন করে এ কঠিন পথে চলতে থাকি।
ইতোমধ্যে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজে স্নাতকে ভর্তি হই কিন্তু কলেজ ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের দখলে। ক্লাস করতে পারিনা,পরীক্ষা দিতে গেলে তাড়া খাই,ফরম ফিলাপে বাঁধা আসে। এই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয় কলেজেরই কয়েকজন মানবিক ও নৈতিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য যারা ছাত্রদল ট্যাগ মুক্ত ব্যক্তি শিমুলকে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। যাদের অসামান্য আন্তরিকতা আমার জীবনে স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
২০১৭ সালের ২৫শে অক্টোবর মোটরসাইকেলে হামলার পর ২১ দিন ঢাকা উত্তরা পপুলার হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মায়ের কোলে ফিরে আসি।
২০১৮ সালে শবেবরাত এর আগের দিন হরিনটানা থানার ওসির স্পেশাল টিম, খালিশপুর থানাধীন পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে থেকে বৃষ্টির মধ্যে ধরে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে চোখে কাপড় বেধে ক্রসফায়ারের জন্য টুটুলনগর আবাসিক এলাকার ঘেরে নিয়ে যায় ও পরবর্তীতে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন চায়। চলতে থাকে একের পর এক বিভীষিকাময় দিনের এক ঘটনা ।
পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২৫ শে ফেব্রয়ারী সরকারী হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজের ছাত্রদলের আহবায়ক পদ প্রাপ্ত হই এবং ২৭ শে মে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষে রাজপথ থেকে গ্রেফতার হই এবং দ্বিতীয়বার মামলা হয়। ২০২৩ সালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আমার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করার ফলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাথে ব্যপক সংঘর্ষের পর তৃতীয় দফা মামলার শিকার হই।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চার দফা দাবিতে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'-এর ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি দেয়। ২ থেকে ৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করি।একই সাথে ঢাকা আজমপুর ও হাউজ বিল্ডিং এলাকায় দল মত নির্বিশেষে ছাত্র জনতা সক্রিয় অংশগ্রহণ করে স্বৈরাচারী শাষক পতনের এক দফা দাবী আদায় পর্যন্ত সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি।
এসময়ে জননেতা তারেক রহমানের সার্বক্ষনিক দিক নির্দেশনা এবং অতীত শোষণ নিপিড়ন এ আন্দোলনকে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে।জুলাই'২৪ আন্দোলন একটি বড় বিজয় এনে দিয়েছে। এই বিজয়কে লুন্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না। তাই সকল ছাত্র শিক্ষক সহ সহযোদ্ধাদের প্রতি আহবান দেশ ও দশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মানসিকতা তৈরী করতে হবে।
ছাত্র রাজনীতি নেতৃত্বের গুনাবলি গড়ে তোলে, সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং সমাজের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শক্তি যোগায়। কিন্তু লক্ষ্য থেকে বিচ্যূত হলে সহিংসতা, দখলদারিত্ব এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারন হবার পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে।তাই শিক্ষা ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন, যৌক্তিক ও গনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে কৌশল অবলম্বন করতে হবে।আমরা নুতন এক বাংলাদেশের প্রত্যাশায় আছি।