কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৭টি পশুর হাট বসলেও অনেক ক্রেতা খামার থেকে পশু ক্রয় করতে পছন্দ করেন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার গবাদিপশুর খামারগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতার সমাগম। আবার অনেক ক্রেতা কোরবানির জন্য পশু পছন্দ করে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে বুকিং দিয়ে রাখছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গবাদিপশুর খামার। মূলত এসব খামারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু মোটাতাজা করা হয়। খামারিরা প্রথমে চট্টগ্রাম ও তার আশেপাশের জেলা থেকে ছোট গরু সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলোকে খামারে লালনপালন করে মোটাতাজা করার পর ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় এ বছর ৪৫ হাজার ৩৭১ টি কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে ৪৭ হাজার ১২৪ টি। যা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও ১ হাজার ৭৫৩ টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
শনিবার (৩১ মে) সকালে উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব মাহালিয়া গ্রামের চিতামুড়া এলাকার 'মমতাজ ডেইরি ফার্ম' ঘুরে দেখা যায়, তাদের মোট চারটি গোয়ালঘরে ১২০টি মোটাতাজা গরু রয়েছে। প্রতিটি গোয়ালঘরে সাইজ অনুযায়ী গরুগুলোকে সারিবদ্ধভাবে বেধে নেপিয়ার ঘাস খেতে দেওয়া হয়েছে। খামারের কয়েকজন কর্মী গোয়ালঘরের পার্শ্ববর্তী জমি থেকে নেপিয়ার ঘাস খাটছেন আর বাকিরা গরুগুলোর পরিচর্যা করছেন।জানতে চাইলে মমতাজ ডেইরি ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের খামারে মোট ১২০টি মোটাতাজা গরু রয়েছে। তার মধ্যে কিছু গরু ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিদিন কোরবানির জন্য গরু দেখতে অনেক ক্রেতা আমাদের খামারে আসছেন। কেউ গরু দেখে পছন্দ করছেন আবার কেউ গরু পছন্দ করে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে দিচ্ছেন। যারা অগ্রিম গরুর টাকা পরিশোধ করছেন আমরা কোরবানির আগের দিন নিজস্ব খরচে তাদের বাড়িতে গরুগুলো পৌঁছে দিব।
তিনি আরও বলেন, কোরবানি ঈদের পরপরই আমরা চট্টগ্রাম ও তার আশেপাশের জেলা থেকে ছোট গরু সংগ্রহ করি। পরে সেগুলোকে প্রায় এক বছর লালনপালন করে সঠিক পরিচর্চার মাধ্যমে মোটাতাজা করা হয়। আমরা প্রায় ৮০ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছি। বেশিরভাগ সময় খামারের গরুগুলোকে ওই ঘাস খাওয়ানো হয়। এ ছাড়াও গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহারের জন্য খামারের নিজস্ব জমিতে আমরা ধান উৎপাদন করে থাকি। বর্তমানে আমাদের খামারে সর্বনিম্ন ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকা দামের পর্যন্ত গরু রয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে পশু প্রস্তুত করেছেন। তাতে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় দেড় হাজারের বেশি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। আমরা খামারিদের সার্বক্ষণিক বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছি।
ইতোমধ্যে ক্রেতারা খামারে থেকে গরু পছন্দ করে বুকিং দিতে শুরু করে দিয়েছেন। আবার অনেক পাইকারি পশু বিক্রেতা গ্রামাঞ্চলের খামারগুলো থেকে পশু ক্রয় করে চট্টগ্রামসহ আশেপাশের জেলায় বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছেন। পশু বিক্রি করে ভালো দাম পেলে খামারিরা বেশি লাভবান হবেন এবং আগামীতে পশু পালনে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।