গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, সাদুল্যাপুর, সুন্দরগঞ্জ এবং সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল সব পরিবারে মাটির ঘর ছিল। বাঁশের বেড়া দিয়ে নির্মিত ঘরের চেয়ে মাটির বেড়া দিয়ে তৈরী ঘর অনেকটাই নিরাপদ ছিল। ফলে প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতে দু’একটি মাটির ঘর দেখা যেত। মাটির ঘর ছিল গরমের জন্য আরামদায়ক এবং শীতকালে বাতাস প্রবেশ করতে পারতো না বিধায় বসবাস উপযোগী ছিল।
তাছাড়া সিঁদ কেটে চুরির প্রবণতা গ্রামে ব্যাপক ছিল। চোরের উপদ্রুব থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই এ ঘরের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করতো। এঁটেল মাটি দিয়ে এ ঘর তৈরী করা হতো। ৩০-৪০ ইঞ্চি ভিত্তি দিয়ে মাটির কোঠা নির্মাণ করা হতো। দুই থেকে ৩ ফিট উঁচু করে মাটি পানি দিয়ে মণ্ড তৈরী করে মাটির দেয়াল গাঁথা হতো এবং দেয়ালের দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে বাঁশের কঞ্চি দেয়া হতো মজবুত করার জন্য।
এভাবে একটি ঘর তৈরী করতে ৪ থেকে ৬ মাস সময় লেগে যেতো। কেউবা দ্বিতল কোঠা নির্মাণ করতো। ঘরের উপরে খড়ের অথবা টিনের চালা দিয়ে ছাউনি দেয়া হতো। ঘরের ছাদে গৃহিনীরা গৃহস্থালী জিনিসপত্র সহ পেঁয়াজ ও রসুন রাখতো। মানুষের অথনৈতিক সমৃদ্ধি ও জীবনমানের পরিবর্তনের ফলে গ্রামীণ মানুষের এসি ঘর বা মাটির দালান দৃষ্টিতে পড়ে না বললেই চলে। উত্তরাঞ্চলের অনুন্নত গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর ও গোবিন্দগঞ্জে কতিপয় বাড়িতে মাটির ঘর দৃষ্টিতে এলেও সেখানে লোকজন বসবাস না করে গরুর গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়।
সাদুল্যাপুর উপজ্যেলার বাসিন্দা শামসুজ্জামান ঝন্টু এ প্রতিবেদককে বলেন, মাটির ঘরে প্রচুর ইঁদুরের উৎপাত হয়, তাই কষ্ট করে ইটের বাড়ি তৈরী করেছি। আর মাটির ঘর তৈরীর শ্রমিকও এখন পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. সুলতান আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, আধুনিকতার ছোঁয়া এবং রুচির পরিবর্তনের ফলে মানুষ মাটির ঘরে বসবাসের চিন্তা না করে ইট দিয়ে নির্মিত ঘরে বাস করছেন।