শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
রাজা বাবু’র দাম ১০ লাখ টাকা

ভেড়ামারায় ঈদুল আযহা উপলক্ষে খামারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ০১ জুন ২০২৫, ১৫:৪৬
ভেড়ামারায় ঈদুল আযহা উপলক্ষে খামারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন
কোরবানীর জন্য খামারে গরু প্রতিপালিত। ছবি: যায়যায়দিন

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ঈদুল আযহা উপলক্ষে শেষ মুহুর্তে খামারীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। হাটে বাইরের ক্রেতা আসবেন কি না? এসবসহ নানাবিধ কারনে ঈদে পশু বিক্রি ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে খামারিরা।

প্রাকৃতিক উপায়ে ও দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন পালন এবং মোটাতাজা করেছে খামারীরা। লাভের আসায় শেষ মুহুর্তে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ন্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে।

1

পশু খাদ্যের দাম বেড়েছে, তাই বাড়তি দামে পশু বিক্রয় করতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে, হারাতে হবে পুঁজি। হাউখালি-মাদিয়া সড়কের ভিটি এলাকায় আমেরিকান প্রবাসী এগ্রো ফার্মে অর্ধ শতাধিক বাহারি গরু শোভা পাচ্ছে। রাজা বাবু’র দাম চাচ্ছে ১০ লাখ টাকা।

ঈদুল আজহার বিশেষ আকর্ষন কোরবানির পশু জবেহ। করোনার মহামারি ও গো-খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গেল দুই-তিন বছর তেমন লাভ করতে পারেনি খামারিরা। অনেকে আবার লাভ ছাড়ায় বিক্রি করেছেন পশু।

লোকসানের ভয়ে কেউবা ছেড়ে দিয়েছে পশুপালন। এবছর পরিমিত লাভের আশায় পশু পরিচর্যা করেছেন খামারিরা। কিন্তু এবার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি আরো বেশি।

পরিচর্যা খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। সেজন্য পশু বিক্রি ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পশু খামারি ও পালনকারীরা। খামারিসহ অন্যরাও ঈদুল আযহা সামনে রেখে সারা বছর গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লালনপালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন।

তাই ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয় তাঁদের।

ভেড়ামারার জগশ্বর কুঠিপাড়া এলাকার আশানুর রহমান বলেন. পরম যত্নে ছেলের মত রাজা বাবুকে লালন-পালন করেছি। রাজা বাবু’র দাম ১০ লাখ টাকা। তার পরও আলোচনার মধ্যামে রাজা বাবুকে বিক্রয় করা হবে।

হাসানুজ্জামান বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেই খামারিরা সারাবছর পশু হিসেবে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লালন পালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হয় তাদের।

শুধু খামারিরা নয়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিধবা মহিলা বা সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে সরকারি, বে-সরকারি চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ গরু, ছাগল, ভেড়া পালন করেন। তারাও পরিচর্যা খরচ, বেঁচাবিক্রি ও পরিমিত লাভের অংশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

এছাড়াও লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতী পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছে ডেইরি ফার্ম বা গরু-ছাগল মোটা তাজাকরণ পেশা। এই কারনেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বড় বড় খামার।

সেখানে সারাবছর কসাইদের কাছে পশু বিক্রি করা হলেও স্পেশাল পশু তৈরি করা হয় কোরবানি ঈদে অধিক লাভে বিক্রির জন্য।

রাজমিন্ত্রী খিলা হোসেন বলেন, তাঁদের বাড়িতে এবছর ২টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ১বছর আগে গরু গুলো প্রায় ১লাখ টাকায় কিনেছিলেন। এখন খরচ খচ্চাসহ দাম পড়েছে প্রায় ২লাখ টাকা। ৩-৪ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি। গত বছর গরুতে তাঁর লোকসান হয়েছে।

রওশনারা বেগম বলেন, তাঁদের খামারে এবছর ৬টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ছয়মাস আগে গরু গুলো প্রায় ১০ লাখ টাকায় কিনেছিলেন। এখন খরচ খচ্চাসহ দাম পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। ২২-২৩ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।

তাঁর ভাষ্য, তিনি আরো কিছু গরু কিনে ট্রাকে করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ঈদের বাজারে গরু গুলো বিক্রি করবেন। গত দুইবছরে গরুতে তাঁর প্রায় ৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

আমেরিকান প্রবাসী এগ্রো ফার্মের মালিক আ: মান্নান বলেন, এবছর খামারে কুরবানির জন্য ৫০টি হৃদপুষ্ট পশু রয়েছে। এবারের জন্য খামারে প্রায় ৮ থেকে ২০ মণ ওজনের ৫০টি গরু আছে। গরু গুলো শুরু থেকেই ঘাস ও দানাদার খাবার খাওয়াচ্ছি। নিজস্ব জমিতে লাগানো ঘাস খেকে বেশির ভাগ সময় ঘাস খাওয়ানো হয়।

ভেড়ামারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: কানিস ফারজানা বলেন, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে উপজেলায় গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন খামারে বড় বড় গরু আছে।

খামারিদের সঙ্গে আমরা সব সময় যোগাযোগ রাখছি এবং সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। উপজেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু আছে।

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পশু বিক্রির জন্য ভেড়ামারায় ২টি সপ্তাহিক হাট রয়েছে। এছাড়াও অনলাইনে চলে বেচাকেনা। ন্যায্যমূল্যে পশু বেচাকেনার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে