গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার ছাদ থেকে পড়ে জাকির হোসেন নামে এক শ্রমিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এসময় পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এতে পুলিশ শ্রমিক মিলিয়ে আহত হয়েছেন শতাধিক। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) সকালের দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপজেলার নয়নপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এরআগে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া গ্রামের নতুন বাজার এলাকার জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড নামক কারখানার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে ওই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতরাতে জাকির হোসেন নামে এক শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ জানতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চান শ্রমিকরা। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশ দেখবে এবং এডমিনের পক্ষে কোনো কথা বলা সম্ভব নয় বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এতে উত্তেজিত শ্রমিকরা প্রথমে কারখানার সামনে জড়ো হয়। একপর্যায়ে কারখানার ভেতর বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চালায়। পরে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ এসে বাঁধা দেয়। এসময় পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় শ্রমিকদের। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এতে অর্ধ শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে শ্রমিকরা। তাদের আঘাতে ১২জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশে ছুটাছুটি করে। এ ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
রুহুল আমিন নামে এক শ্রমিক বলেন, ' জাকির হোসেন ছুটি চেয়েছিলেন। তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। এছাড়াও তার কিছু পাওনা দাওনা ছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে এগুলো চাইলে তাকে অপমান করে। তা সইতে না পেরে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ পুলিশ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।'
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজনে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত হচ্ছে। তারপরও শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে মহাসড়ক অবরোধ করতে যায়। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে মহাসড়কে যেতে বাঁধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা চালায় তারা। এতে ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসলে শ্রমিকরা আন্দোলন থেকে সরে যায়।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিক মৃত্যুর খবর পেয়ে গতরাতেই কারখানায় পুলিশ পাঠিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। পারিবারিক কলহের কারণে সে আত্মহত্যা করছে কি না বা অন্য কোনো কারন আছে কিনা তা স্বজনদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা চলছে।'
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড নামে ওই কারখানায় জাকির হোসেন নামে এক শ্রমিক মারা যান। নিহত জাকির হোসেন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মোক্তার উদ্দিনের ছেলে। তিনি শ্রীপুরের জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন।
কারখানার শ্রমিক ও সিসি টিভি ফুটেজ সূত্রে জানা যায়, ‘কারখানার ৮তালার ছাদ থেকে হঠাৎ নিচে পড়ে যায় জাকির। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।কারখানার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, জাকির একাই ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে এদিক-সেদিক তাকায়। কিছুক্ষণ পর লাফ দেয়।