সারাদেশ

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরে অবস্থিত বিশ্বশান্তি মঞ্জিল পাক দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো জেলার সর্ববৃহৎ ঈদুল আযহার জামাত। বৃহস্পতিবার (৭ জুন) সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত এই মহাজামাতে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার আশেকান, মুরিদ ও তাওহীদের পথযাত্রী অংশগ্রহণ করেন।

জামাত শুরুর আগ থেকেই প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকা ভরে ওঠে মানুষের ঢলে। ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির প্রতিধ্বনি, চোখে অশ্রু ও নত হৃদয়ের দৃশ্য এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি করে। কুরবানির গভীর তাৎপর্য ধারণ করে প্রতিটি রুকু ও সেজদা হয়ে ওঠে আত্মার এক নিঃশব্দ নিবেদন।

নামাজ শেষে মুসল্লিরা দলে দলে দরবার শরীফে ছুটে যান এবং পরম শ্রদ্ধায় জিয়ারত করেন খাজা শাহ মুহাম্মদ ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ.)-এর পবিত্র রওজা শরীফ। সেখানে তারা নিমগ্ন হন আত্মিক সংলাপে, কান্নার নীরব ধ্বনি ও রূহানিয়াতের আবেশে।

এরপর দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়া ক্বিবলা তাশরীফ এনে মোনাজাত পরিচালনা করেন। তাঁর হৃদয়ছোঁয়া দোয়ায় মুহূর্তেই আচ্ছন্ন হয় সারা মাঠ। বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়

“হে পরওয়ারদেগার, আমাদের কুরবানি কবুল করো। অন্তরকে করো স্বচ্ছ, পৃথিবীর প্রতিটি কোণে বর্ষণ করো শান্তি। আমাদের এক করো, আলোয় ভরাও হৃদয়। প্রিয় নবীর উম্মত হিসেবে কবুল করো আমাদের।”

মোনাজাতে অনেকেই চোখের জলে নিজেদের আত্মা কুরবানি করেন। কেউ চুপিচুপি, কেউ বুকের ভেতর জমে থাকা অনুশোচনা আর পীড়নের ভার নামিয়ে দেন নীরব কান্নায়। এটি ছিল যেন আত্মশুদ্ধির এক পবিত্র সকাল—যেখানে পশু নয়, আত্মা ছিল কোরবানির উৎসর্গ।

ঈদ জামাত পরিচালনা করেন দরবার শরীফের পেশ ইমাম ও খতিব আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল আওয়াল সাহেব। তাঁর শুদ্ধ ক্বিরাত ও ভাবপূর্ণ খুতবায় উঠে আসে ঈদের প্রকৃত দর্শন ও আত্মিক আহ্বান।

জামাত শেষে ফিরতি পথে কারো মুখে ছিল না উৎসবের চিৎকার ছিল এক অনাবিল প্রশান্তি। বাতাসে ভেসে বেড়ায় সেই দোয়া, যে দোয়ায় ঈদের অর্থ হয়ে ওঠে আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্যের কান্না।