কোরবানি পশুহাট শেষ হওয়ার প্রায় ৭২ ঘন্টা পরেও ঢাকার কেরানীগঞ্জের আওতাধীন বিভিন্ন জায়গায় পশুর বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে; অথচ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিলো প্রশাসন।
আগানগর, জিনজিরা এবং হাসনাবাদ রোডে স্থাপিত পশুর হাটের বর্জ্য এখনো রাস্তার উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। হাট শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রাস্তার ওপর থাকা বাঁশ-খুঁটিসহ নানা উচ্ছিষ্ট, খড় ও চট পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এগুলো থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধ এলাকাবাসীর জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছে। এতে যানজটের পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রবও বেড়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, আগানগর আমবাগিচা খেলার মাঠে লাগানো বাঁশ-খুটির একটিও সরানো হয়নি। বাবুবাজার ব্রিজের কেরানীগঞ্জ প্রান্তের পাশের রাস্তার উপর বাঁশ এখনো লাগানো রয়েছে।
হাটের ভেতরে থাকা গোবর ও কাদা মিশ্রিত খড় ও গো-খাদ্যের উচ্ছিষ্ট সরাসরি বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে নদী দূষণ করা হচ্ছে। কদমতলি লায়ন মার্কেটের উল্টোপাশে মহাসড়কের ওপর রাখা হয়েছে ময়লার স্তূপ।
সড়কের পাশের বড় ছোট বর্জ্যস্তুপ আর গোবরের গন্ধের কারণে পরিবেশ হয়ে উঠেছে অসহনীয়। একই অবস্থা জিনজিরা ও হাসনাবাদ পশুহাটে। সেখানেও জনি টাওয়ারের সামনে সড়কের ওপর রাখা হয়েছে জিনজিরা হাটের ময়লার স্তূপ।
স্থানীয়রা জানান, পশুহাট ইজারাদাররা পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক ও ব্লিচিং পাউডার ছিটায়নি। তীব্র রোদ আর মাঝেমধ্যে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে সেসব বর্জ্য পরে পুঁতিগন্ধময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এদিকে, কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কোরবানি পশুহাটের বর্জ্য অপসারণে আগে থেকেই নানা পরিকল্পনা ঘোষণা করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পশুর বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিলো।
আগানগর ইউনিয়নের যুবক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আগানগর খেলার মাঠসহ সড়কে যেখানে গরু-ছাগল দাঁড় করানো হয়েছিল, সেখানে খানাখন্দে বর্জ্য জমে থাকতে দেখা যায়। গরুর গোবর ও কাদা মিশে একাকার হয়ে থাকায় রাস্তা দিয়ে হাঁটার পরিবেশও নেই।
ঈদ শেষ তো তিনদিন পার হয়ে গেল। এখনও এই খেলার মাঠ ও সড়কে গোবর পড়ে আছে। গোবর আর কাদা-পানি মিলে কত খারাপ পরিবেশ। এই এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, কোনটা গোবর আর কোনটা কাদা সেটাও বোঝার উপায় নেই। সব এক রঙের হয়ে গেছে। যেহেতু এখানে গরুর হাট বসেছিল তাই ব্লিচিং পাওডার ছিটিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত ছিল।
আমবাগিচা এলাকায় বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, হাটের বর্জ্যে পচন ধরেছে। গন্ধে বাসায়ও টেকা যাচ্ছে না। এলাকার ছোট ছোট বাচ্চারা এদিক দিয়ে খেলাধুলা করে। এমন পরিবেশে মানুষ থাকবে কী করে? এসব দেখার কি কেউ নেই?
প্রতি বছরই ঈদের পর এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। কেরানীগঞ্জ উপজেলার রিকশাচালক মো. শহীদ বলেন, হাট শেষ হলেও বাঁশ-খুঁটি না খোলায় অনেক রাস্তা বন্ধ রয়েছে। চলাচল করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থী তাহমিনা পারভীন বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা সামনে। পড়াশোনায় মন বসাতে পারছি না।
চারপাশে মশার উপদ্রব অনেক বেড়েছে। আর হাটের গোবরের উটকো গন্ধে বমি বমি লাগে, কিছুতেই মনোযোগ ধরে রাখতে পারছি না। জিনজিরা ইউনিয়য়ন বাসিন্দা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, কোরবানি পশু হাটের পরে বড় বড় বর্জ্যের স্তূপগুলো এখনো সরানো হয়নি। সেগুলো বৃষ্টির পানিতে এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এ বিষয়ে জিনজিরা হাটের ইজারাদার মোজাদ্দেদ আলী বাবু বলেন, আমরা হাটের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য পরিচ্ছন্নতাকমীদের সাথে চুক্তি করে তাদেরকে টাকা দিয়ে দিয়েছি কিন্তু তারা শর্ত মোতাবেক কাজ করেনি। এতে জনভোগান্তি হচ্ছে স্বীকার করে তিনি আরও বলেন দুই-একদিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। না হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ শতাংশ টাকা রেখে দেয়া হয়েছে, সেটা দিয়ে উপজেলা প্রশাসন নিজেরাই পরিষ্কার করে নিবে।
আগানগর হাটের ইজারাদার আরশাদ রহমান সপুর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ব্যর্থতার দায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উপর চাপিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা অনেক বছর হাট-ঘাটের ইজারা নেইনি তাই এ বিষয়টি এটা সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা চেষ্টা করছে দ্রুত সম্ভব এগুলো অপসারণ হয়ে যাবে। আর মহাসড়কের পাশে মায়লার স্তুপ আগামীকাল আমি নিজে গিয়ে সরিয়ে ফেলবো।নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলার বিষয়টা আমি অবগত নই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।