বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বর্জ্য অপসারন অব্যবস্থাপনায় সারিয়াকান্দির শশ্মান ঘাট ভাগাড়ে পরিণত

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ১০ জুন ২০২৫, ০৯:৫৬
আপডেট  : ১০ জুন ২০২৫, ১১:০৩
বর্জ্য  অপসারন অব্যবস্থাপনায় সারিয়াকান্দির শশ্মান ঘাট ভাগাড়ে পরিণত
সারিয়াকান্দির পৌরসভা এলাকার শশ্মান ঘাট ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। ছবি: যায়যায়দিন

আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বগুড়ার সারিয়াকান্দির পৌরসভা এলাকার শশ্মান ঘাট ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। ফলে উপজেলার কালিতলা এলাকার এই শশ্মান ঘাটে মৃত মানুষের সৎকার করতে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।

এ ছাড়া নদীসহ উপজেলার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখ পড়ছে।

1

সোমবার যমুনা নদীর তীর ঘেঁষা কালিতলা এলাকার শশ্মান ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। মানব সৃষ্ট এসব ময়লা–আবর্জনা গিয়ে মিশছে যমুনার পানিতে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারপাশে, দূষিত হচ্ছে নদী।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পুরো পৌরসভার যত পচা ফল, সবজি, মাছ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উচ্ছিষ্ট এবং পরিত্যক্ত ময়লা–আবর্জনা নদীতীরে ফেলে দূষণ করছে।

পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলা অব্যবস্থাপনার এর জন্য দায়ী। কারন খোদ পৌরসভার ট্রাক প্রতিদিন সব নোংরা সকালে এসে এখানে রেখে যায়। এসব এলাকায় দিনরাত সমানতালে প্রকাশ্যেই ময়লা–আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালীতলা শশ্মান ঘাট এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক, পচা পেঁয়াজ, আলু, দোকানের ময়লা–আবর্জনা, হোটেল-রেস্তোরাঁর আবর্জনা, খাবারের উচ্ছিষ্ট, সুপারির খোসা, কলার কাঁদি, পচা সবজি এবং মাছের উচ্ছিষ্ট ফেলে দেওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। প্লাস্টিকের সামগ্রীর ময়লার স্তূপ তৈরি হয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে পরিবারের সংখ্যা ৫ হাজারের মতো ও লোক সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। গড় হিসাবে প্রতিটি পরিবার থেকে প্রতিদিন দুই কেজি পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়।

এর বাইরে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, একটি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, থানা, একটি কাঁচাবাজার, স্কুল-কলেজ, মার্কেট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন ধরনের দপ্তর থেকে প্রতিদিন প্রচুর ময়লা-আবর্জনা তৈরি হয়। প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বিভিন্ন স্থান থেকে থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে।

জানা গেছে, সারিয়াকান্দি পৌরসভা একটি (গ) শ্রেনীর পৌরসভা এটি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ২৬ বছর পুরানো পৌরসভা হলেও শহরের ময়লা অপসারণের জন্য পৌরসভার নিজস্ব কোনও ভাগারের জায়গা নেই।

কালিতলা শ্মশান ঘাটি থেকে সামনে যমুনা নদীর চরে ও নদীতে এসব ফেলা হয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় দুর্গন্ধে বাতাস দূষিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।

এতে করে নদীর পানিতে বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ জীবানু ছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পৌরসভার বাসিন্দাদের দাবি, এত বছর হলো পৌরসভা হলেও ময়লা ফেলার একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড (ময়লা ফেলার ভাগাড়) স্থাপন করতে পারেনি কোনও মেয়র। ফলে যত্রতত্র ময়লা ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ময়লা ও ড্রেনের আবর্জনা সঠিক সময়ে অপসারণ করা হয়না। এদিকে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দাবি, তারা নির্দিষ্ট সময়েই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন।

বগুড়া জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টান পরিষদের সভাপতি ও সারিয়াকান্দি শশ্মান কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তী বলেন, যেহেতু স্থায়ী শশ্মান আামাদের হিন্দু ধর্মালম্বীদের এখনও হয়নি তাই আমাদের নদীর কিনারায় মৃতদেহ সৎকারের কাজ করতে হয়।

কিন্তু সেখানে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় ময়লার গন্ধে সেখানে দাঁড়ানো যায় না। সৎকারের পর কিছু নিয়ম কানুন ও গোসল করা কঠিন হয়ে পড়েছে কারন পানিতে ভাসতে দেখা যায় নোংরা আবর্জনা।

আমি পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এখানে ময়লা আবর্জনা আর ফেলা না হয়। তাহলে এখানে পরিবেশটা ভালো থাকবে। আমাদের সনাতন ধর্মালম্বীদের মৃতদের সৎকার সঠিকভাবে করতে পারবো।

সারিয়াকান্দি পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো.শহিদুল হক বলেন, ‘সারিয়াকান্দি পৌরসভার নিজস্ব কোনও ডাম্পিং এরিয়া না থাকায় ওখানে ময়লাগুলো ফেলানো হয়। অতি তাড়াতাড়ি নির্দিষ্ট ডাম্পিং এরিয়া স্থাপন করে সেখানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. শাহারিয়ার রহমানকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি বলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে