শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
খোলা আকাশের নীচে পরিবারের সদস্যরা  

পূর্বধলায় রবিদাস সম্প্রদায়ের ৫টি ঘর গুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা

পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
  ১১ জুন ২০২৫, ১৪:৪৯
পূর্বধলায় রবিদাস সম্প্রদায়ের ৫টি ঘর গুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা
পূর্বধলায় রবিদাস সম্প্রদায়ের ৫টি পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে তাদের ঘর গুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। ছবি: যায়যায়দিন

নেত্রকোণার পূর্বধলায় রবিদাস সম্প্রদায়ের ৫টি পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে ৫টি ঘর গুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ওই ৫টি পরিবারের ২২জন সদস্য এখন খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের রামপুর কাছিয়াকান্দা মৌজায় জালশুকা বাজারে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সুনিল রবিদাস জানান, তারা ৫টি পরিবারের ২২জন সদস্য উত্তরাধিকার সুত্রে দীর্ঘ প্রায় ৪০-৫০বছর যাবত বিশকাকুনী ইউনিয়নের জালাশুকা বাজারে ১২শতক জমিতে বসবাস করে আসছেন।

1

বসবাসকৃত জমিটি রামপুর কাছিয়াকান্দা মৌজায় ১নং খতিয়ানের। কিন্তু সম্প্রতি ধারা গ্রামের জনাব আলীর ৫পুত্র, স্থানীয়ভাবে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত সিরাজুল ইসলাম, মো: বকুল, কদ্দুছ, শফিকুল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম জায়গাটি তাদের বলে দাবী করে আসছেন।

পরে জায়গাটি মাদ্রাসার জন্য নির্ধারিত বলে একটি সাইনবোর্ড ও টানিয়ে দেন। এরই জের ধরে গত ঈদুল আজহার আগের দিন শুক্রবার আমাদের সবাইকে জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য শাসিয়ে যান। আমরা বাড়ী না ছাড়লে ঈদের পরদিন রবিবার (৮ জুন) সকালে সিরাজুল ইসলাম, বকুল, কদ্দুছ, শফিকুল, আজিজুল আরো ২০-২৫জন লোক নিয়ে রামদা, কুড়াল, লাঠি নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে।

আমরা ভয়ে সরে গেলে তারা আমাদের ৫টি ঘর কেটে, ভেঙ্গে মাটির সাথে গুড়িয়ে দেয়। এ সময় বাধা দিতে গেলে তাদের কয়েকজনকে মেরে আহত করে।

এরপর থেকেই আমরা ৫টি পরিবারের মহিলা শিশুসহ ২২জন সদস্য খোলা আকাশের নীচে দিনযাপন করছি। ভাংচুরের সময় ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্নালংকার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন মালামালও নিয়ে যায়।

এতে তাদের প্রায় ৮-১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। ঘটনার পর পূর্বধলা থানায় অভিযোগ দিলে পূর্বধলা থানা পুলিশ সাথে সাথে ঘটনা স্থলে ছুটে যান এবং ঘটনার পর থেকেই পুলিশী প্রহরা মোতায়েন করেন।

আজ বুধবার সরেজমিনে দেখতে গেলে দেখা যায় ৫টি ঘর কুপিয়ে ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। টিনগুলি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় দুটি ঘরের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে। এ সময় আহত বাসন্ত রানী রবিদাস জানান, ভাংচুরের সময় আমি বাধা দিতে দিলে আমার হাতে রড দিয়ে বাড়ি দেয়।

এতে হাত কেটে গেলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সেলাই দিয়েছি। বর্তমানে সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। রান্না করতে পারছি না। জরুরী প্রয়োজনে শৌচাগার করতে পারছি না।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আকবর আলী, মো: সেলিমসহ একাধিক ব্যক্তি জানান রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে বসবার করে আসছেন। এখন ধারা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের লোকজন দাবী করছেন জমিটি তাদের।

এরই প্রেক্ষিতে এই ঘটনার সুত্রপাত। সিরাজুল ইসলামের লোকজন তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে কাগজপত্র নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে শালিসী বৈঠক করেছেন কিনা জানতে চাইলে তারা জবাব দেন, না তারা এমন কোন কিছুই করেন নি। তারা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

জমির দাবীদার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান রবিদাস সম্প্রদায়ের বসবাসকারী জমিটি আমাদের মালিকানার। তাদেরকে আমার জমি থেকে এর আগে কয়েকবার সরে যেতে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তার জমি মেপে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের লোকজনের কাছে দাবী জানান।

বিশকাকুনী ইউনিয়ন ভুমি সহকারি কর্মকর্তা মো: হাবিবুর রহমান খান জানান, রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাসকারী রামপুর কাছিয়া কান্দা মৌজায় ৮৫০ দাগের ১২ শতাংশ জমিটি ১নং খতিয়ানের। এ জমির অন্য মালিকানার কোন দাবীদার আমাদের কছে যায়নি।

এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনার খবর জানাজানি হলে সেনাবাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আজ বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার, সহকারি কমিশনার (ভুমি) নাজনীন আখতার, অফিসার ইনচার্জ তদন্ত মিন্টু দে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয় এবং টিন ও নগদ অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মুহাম্মদ নূরে আলম জানান, ‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে একটি অভিযোগ পেয়েছি। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে পুলিশী প্রহরা মোতায়েন করা হয়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে