সারাদেশ

গত কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত উত্তরের জেলা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার জনজীবন। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে ডায়রিয়া ও জ্বরের রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্কদের চেয়ে শিশু রোগীও আছে। গত এক সপ্তাহে হঠাৎ করে গরম বৃদ্ধির কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পাকেরহাটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রোগী ভর্তি আছে ৬৯ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ১৫ জন, জ্বরের রোগী সংখ্যা ০৩ জন ও হিটস্ট্রোকে ভর্তি আছেন ১ জন রোগী। ডায়রিয়া, জ্বর ও হিটস্ট্রোকের রোগীসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা বেশী জনবলের চেয়ে বেশি। তবুও রোগীদের সেবা দিতে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স-মিডওয়াইফ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে এই উপজেলায় ডায়রিয়া, জ্বর ও হিটস্ট্রোকের রোগীর প্রকোপ বেড়ে যায়। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন ডায়রিয়া রোগী, ৫৫-৬০ জন জ্বর ও ৫-৭ জন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী সেবা নিতে আসছেন। এর মধ্যে ঈদের পরেরদিন থেকে গড়ে ১৫ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ দুপুর ১২ টায় তাপমাত্রা ছিল ৩৫.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের আর্দ্রতা ৫৭%।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা হোসেনপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, ভ্যাপসা গরমে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আমার ৩ বছর বয়সী মেয়ে হঠাৎ করে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থের পথে।

ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ভান্ডারদহ গ্রামের আকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা কর্মজীবি মানুষ কাজেই তীব্র গরমেও বাইরে কাজ করতে হয়। কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। জরুরী বিভাগে আসলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ড ইনচার্জ বৃষ্টি রায় জানান, বর্তমানে ওয়ার্ডে গড়ে প্রতিদিন ১৫ জনের বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি থাকছেন। রোগীদের চাপ বাড়লেও সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তাঁরা।

এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া, জ্বর, বমি ও হিটস্ট্রোকের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ সময়ে বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। পাতলা পায়খানা শুরু হলে শিশুকে মুখে খাবার স্যালাইন বার বার খাওয়ানো ও মায়ের বুকের দুধও খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সেবায় সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সরকার বলেন, বর্তমান সময়ে তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতার মত মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। তাপ প্রবাহের সময় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। এইজন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করছে।