শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
থামছে না অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন

কাশিয়ানীতে দ্রুত গতিতে কমছে ফসলি জমি!

কাশিয়ানী (গোপলগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১২ জুন ২০২৫, ১৮:৫৭
কাশিয়ানীতে দ্রুত গতিতে কমছে ফসলি জমি!
ছবি: যায়যায়দিন

কোনা ভাবেই থামছে না গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে অবৈধ্য ড্রেজার এবং ভ্যেকু দিয়ে মাটি কাটা। দ্রুত গতিতে কমছে ফসলি জমি। প্রতিদিনই একরের পর একর ফসলি জমি অবৈধ্য ড্রেজারের পেটে চলে যাচ্ছে। নির্বাক প্রশাসন!

কাশিয়ানীতে কৃষি জমি সুরক্ষা আইনের তোয়াক্কা না করে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে ফসলি জমি থেকে বেপরোয়া ভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে মাটি ও বালু ।

1

বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই উপজেলা এলাকায় অন্তত অর্ধশত স্পর্টে চলছে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। দেখে মনে হয় তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

এ ছাড়া দিনের পর দিন ভ্যেকু দিয়ে দুই থেকে তিন ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করছে অসাধু মাটি ব্যাবসায়ীরা।

অন্যদিকে, উপজেলার প্রায় সকল রাস্তায় উন্নয়নে (পাকাকরন) কাজে সরকারি বরাদ্ধ ঠিকঠাক থাকলেও পাকা করণ কাজে রাস্তার ভেতরে গর্ত করে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের চোখের সামনেই

তাদের সহযোগিতায় সরকারি খালের অথবা ফসলী জমি থেকে বালু উত্তলান করে রাস্তা ভরাট করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে রাস্তা না করেই চলে যাওয়ার হুমকি দেয় ওই সব ঠিকদার বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

এসব কারণে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে গতিতে ফসলি জমি। অন্যদিকে পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরুপ প্রভাব। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামীন সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট ও বসতভিটা।

স্থানীয় প্রশাসন মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করলেও কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। উপজেলা প্রশাশনের কর্তাব্যাক্তিরা মোবাইল র্কোট পরিচালনা করতে গেলে অদৃশ্য খবরে সংশ্লিষ্টরা পালিয়ে যায়।

যে কারণে এলাকাবাসী ধরনা করে এসব বালু উত্তোলনের কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারি ও স্থানীয় নাম মাত্র গণমাধ্যম কর্মীরা এবং প্রভাবশালীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সিংগা ইউনিয়নের রাম বাজার,রাজপাট ইউনিয়নের শিল্টা, ধোবাপাড়া, হাতিয়াড়া ইউনিয়নের রাহুথড় বাজার এলাকা, ওড়াকান্দী ইউনিয়নের খাগড়াবাড়িয়া, মাহমুদপুর ইউনিয়নের কুমারিয়া খালে,

ডোমরাকান্দি, পারুলিয়া, পরুলিয়া বিলে, মহেশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়াসহ সিংগা, হাতিয়াড়া, রাহুথড়, পুইশুর, নিজামকান্দি,তালতলা, চন্দ্রদ্বীপ, শিল্টা, সীতারামপুর, বেথুড়ী, সাধুহাটিসহ বিভিন্ন এলাকার

অন্তত ৫০ টি স্পর্টে খাল-বিল, জলাশয়, পুকুর ও ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ যেন এক বালু উত্তোলন ও খননের প্রতিযোগিতা চলছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না।

ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অথচ এমন আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক অবাধে বালু উত্তোলন করছে অসাধু বালু ও মাটি ব্যাবসায়ীরা এবং স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ,ফসলি জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে অবাধে বালু উত্তোলন করার ফলে আশপাশের ফসলি জমি ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত নিরীহ কৃষকরা বাঁধা দিতে গেলে উল্টো হামলা-মামলার হুমকি-ধামকির দেয় সংশ্লিষ্টরা। জমির বালু কেটে নেয়ার পর ড্রেজার ব্যবসায়ীরা পাশের জমির কৃষককে কম দামে জমি বিক্রিতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।

এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচিরেই পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটবে বলে আশংকা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে