রোববার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজস্থলীতে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ

বিপাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ
রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ১৪ জুন ২০২৫, ১৭:০৮
রাজস্থলীতে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ
রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়: ছবি যায়যায়দিন

রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের একটি উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের কাজ ১৮ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৪৮ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়নি।

অথচ ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে চলে গেছেন। যার ফলশ্রুতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা মহাবিপাকে পড়েছেন।

1

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ঘিলাছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার শতাধিক। শিক্ষার্থী অনুপাতে এই প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ কম থাকায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় ভুগছিলেন।

এমতাবস্থায় এলাকাবাসীর দাবির পরিপেক্ষিতে এই শিক্ষাঙ্গন ক্যাম্পাসে ১২ কক্ষের চারতলা ভবনের কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে।

কার্যাদেশ অনুযায়ী কয়েক জন ঠিকাদার পালা বদল করে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ এর কাজও শুরু করে। কিন্তু কাজ ৫৪০ দিনে অর্থাৎ ১৮ মাসে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ৪৮ মাসে কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, ঠিকাদার কর্তৃক ভবনের ৭০-৮০ ভাগ কাজ করে কোটি টাকা বিল উত্তোলন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর পর থেকে দেখা মিলছে না ঠিকাদারের।

নির্মাণাধীন ভবনের দেওয়ালে শ্যাওলা লেগে আছে। ভবনটি দেখতে মনে হয় পরিত্যক্ত। এদিকে বিদ্যালয় ভবনের কাজ চলমান থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরাতন ব্যবহার অনুপযোগী অন্য কক্ষগুলোর সংস্কার কাজ করাননি।

এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান কীভাবে চলবে। এবং আগামী এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এই দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন অভিভাবক, শিক্ষক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহ এলাকার সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্টাতা সদস্য ইউসুফ খান বলেন, স্থানীয় সমাজের বিত্তবানদের বদান্যতায় আমরা বিদ্যালয় ভবনের বরাদ্দ পেলেও ভবনটির কাজ শেষ হবে কি-না এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

ঠিকাদারের লোকজন এখন আর কাজের গোড়ায় আসছে না। ঠিকাদারের কিছু মালামাল যত্রতত্র পড়ে নষ্ট হওয়ার পাশা-পাশি বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা , শিক্ষা উপদেষ্টাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্রদ্ধা শংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, প্রায় অনেক দিন হয় বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ বন্ধ থাকায় যেসব কাজ হয়েছিল, সে গুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মালামাল নষ্ট হচ্ছে। দেওয়ালে শ্যাওলা লেগেছে। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। এবং এসএসসি পরীক্ষার কোচিং শিক্ষার্থীদের কোথায় বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে এ চিন্তা এখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বিদ্যালয়ের এই ভবন নির্মাণ এর অবস্থা জানিয়ে এবং শ্রেণিকক্ষের সমস্যার কথা উল্লেখ করে কয়েক দফায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এর নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এখন আমরা নিরূপায় হয়ে আছি।

এবিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট দীন নাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট ধর্না দিয়েছি। কোনো ফলাফল হয়নি। এখন ঠিকাদার ও দায়িত্বশীল প্রকৌশলীকে ফোন দিলেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী মফিজুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, নানা অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে রেখেছে। আমরা তাকে চাপ দিয়েছি। আমরা তাকে বাতিল করব বলে বলার পর বলেছে, চলতি মাসের ২০-২৫ তারিখের মধ্যে কাজ শুরু করে দ্রুত সম্পন্ন করবে।

এ ব্যাপারে জানতে সাব ঠিকাদার লিটন রক্সির মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পেক্ষাপট ও বিভিন্ন সমস্যা থাকায় আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু দিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে