মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। বর্তমানে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।
পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। প্রচুর রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা আরও সহজ করতে আখাউড়া হাসপাতালে দ্রæত চিকিৎসকসহ জনবল বাড়ানোর দাবী রোগীদের।
আখাউড়া হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ৩১ শয্যার হাসপাতালটিকে থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল, যন্ত্রপাতি এবং ফ্যাসিলিটি সরবরাহ করেনি। ৩১ শয্যার পরিপূর্ণ জনবলও এ হাসপাতালে নেই।
হাসপাতালে ১৪ জন চিকিৎসক দরকার। বর্তমানে কর্মরত আছে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক। অন্ত:বিভাগ, জরুরী বিভাগ এবং আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দিতে হয় এই ৫ জনকেই। এ হাসপাতালে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাই। একজন উপ-সহকারী চক্ষু চিকিৎসক সপ্তাহে মাত্র একদিন রোগী দেখেন। ফলে চোখের রোগীরাও প্রতিদিন সেবা পায় না।
হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ রোকেয়া খাতুন বিনা অনুমতিতে গত দেড় বছর ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাছাড়া হাসপাতালে এম্বুলেন্স থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ড্রাইভার নাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আখাউড়া উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ জেলা সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়ন থেকে রোগীরা আখাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন আউটডোরে ৩০০/৩৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। জরুরী বিভাগে সেবা নেন ৭০/৮০ জন রোগী। অন্ত:বিভাগে প্রতিদিন ৪০/৪৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। রোগী অনুযায়ী চিকিসৎক স্বল্পতার কারণে সেবা পেতে কষ্ট করতে হয় রোগীদের। অপরদিকে বাড়তি রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের।
বৃহস্পতিবার বেলা ১ টার সময় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় তিনজন চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। দন্তবিভাগের একটি কক্ষে দাঁতের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের কক্ষে প্রচুর রোগী।
এসময় ৬৫ বছরের বৃদ্ধা তাহেরা খাতুন বলেন, এক ঘন্টা হয়েছে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। রোগীর ভীড় থাকায় এখনও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। খুব কষ্ট হচ্ছে। এই হাসপাতালে আরও চিকিৎসক দরকার।
মারজিয়া বেগম নামে এক নারী তার ১১ মাসের ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, ২ দিন ধরে ছেলের প্রচন্ড জ¦র।২ ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি। এখনও ডাক্তার দেখাতে পারছি না। হাসপাতালে আরও কয়েকজন চিকিৎসক থাকলে সহজে সেবা পাওয়া যেত। আখাউড়া হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার দাবী জানান তিনি।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ লুৎফর রহমান জানান, প্রতিদিন তিনি ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী দেখেন। এতে তার উপর যেমন চাপ পড়ে। তেমনি রোগীদেরও কষ্ট করে অপেক্ষা করতে হয়।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হিমেল খান বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ৫ জন চিকিৎসক আছে। সীমিত চিকিৎসক দিয়েই আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নাই। জনবল সংকটের বিষয়টি উধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানে হয়েছে।
এ বছরের শেষের দিকে চকিৎসকদের বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা হবে। আশা করি তখন চিকিৎসক পাওয়া যাবে। পরিপূর্ণ জনবল পাওয়া গেলে আরও ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।