সন্তানের ছবি বুকে নিয়ে এখনও স্মৃতি হাতরে বেড়ান, ফ্যাসিস শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে, গুলি বিদ্ধ হয়ে নিহত গোবিন্দগঞ্জের যুবক জুয়েল রানার (২৭) বৃদ্ধ বাবা-মা।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের শাখাহাতী গ্রামের মমতাজ উদ্দন ব্যাপারী আর জমিলা বেগম দপ্ততির ছেলে জুয়েল রানা। মমতাজ জমিলা দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে ছোট জুয়েল রানা।
তিনি তার বাবা-মার সংসার চালাতেন। ছেলেকে বিয়ে দিয়েছিলেন পাশের গ্রামে। এক সময় ছেলে জীবিকার টানে ঢাকা গিয়ে পোষাক তৈরির কারখানায় চাকরি নেন। দুই কন্যা সন্তানের পিতা জুয়েল।
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও দুই ঈদে বাড়ি আসতেন। তার ইচ্ছে ছিল মেয়েদের পড়ালেখা শেষ হলেই বাড়ি ফিরবেন। নিজের টিনের ঘরটি সরিয়ে ইট দিয়ে ঘর দেবেন। সঙ্গে বাবা মা’র থাকার রুম টাও পাকা করবেন।কিন্তু, তার শেষ ইচ্ছে তার পুরন হয়নি। ৫ আগস্ট মিছিলে পুলিশের বৃষ্টির মত গুলি তার সে স্বপ্ন মূহুর্তে মিশে যায়। গুলিতে সড়কে লুটিয়ে পড়া জুয়েলকে সহযোদ্ধারা হাসপাতালে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে জুয়েল না ফেরার দেশে চলে যায়।
জুয়েল রানা মা জমিলা বেগম বলেন, জুয়েলের নিহত হওয়ার পর অনেক সুবিধা এসেছে। কিন্তু সে সুবিধাগুলো তারা সঠিকভাবে পাননি। কারন জুয়েলের মরদেহ দাফনের দুই দিন পর তার স্ত্রী দুলালি বেগম দুই নাতনিকে নিয়ে পিতার বাড়ি চলে যান। যদিও এখন জুয়েলের স্ত্রী গাজীপুরের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করছেন। তার সঙ্গে বসবাস করছে জুয়েলের বড় মেয়ে। ছোট মেয়েটিকে রেখে গেছেন তার নানার বাড়িতে।
তিনি আরও বলেন, ‘সন্তান হারানোর দু:খ বড় কঠিন। তারপরেও যদি মাঝে মধ্যে ওর সন্তান দুটোকে দেখতে পেতাম, তাহলে কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম।’ তা আর হয়ে ওঠে না এই দম্পতির। দূর থেকেই দোয়া করেন তাদের জন্য।
যেহেতু সারাদেশে জুলাই যোদ্ধাদের সরকার নানাভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে, শহীদ জুলাই যোদ্ধার বাবা-মা হিসেবে সেই প্রাপ্যটা যেন সঠিকভাবে পান। অর্থাৎ সরকারিভাবে যে অনুদান ও ভাতা আসবে তার যেন সমবণ্টন করা হয় সেই দাবি এই বৃদ্ধ বাবা-মা’র।
শালমারা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, ইউনিয়ন যুবদলের সহ সাংগঠানিক সম্পাদক জুয়েল রানা ৫ আগস্ট স্বৈরচারী শেখ হাসিনার দোসরদের গুলিতে শহীদ হন। তার পরিবার অত্যন্ত গরীব। তার বাবা-মা আছেন। সংসার চলতো জুয়েলের আয়ে।
কিন্ত এখন সে আয় বন্ধ হওয়ায় খুব কষ্টে রয়েছে পরিবারটি। সরকারিভাবে যে সুযোগ সুবিধা গুলি আসে তা যেন সমবণ্টনের মাধ্যমে স্ত্রী, সন্তান এবং বৃদ্ধ-বাবা-মা পায় সে ব্যাপারে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
শালমারা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শহীদ জুয়েলের সরকারিভাবে যে অর্থ ও সুযোগ সুবিধা আসবে তা যেন সমবণ্টনের মাধ্যমে শহীদ জুয়েল রানার বাবা-মা, তার সন্তান এবং যেন সমবন্ঠন পায় সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে সহায়তা দেওয়া দরকার তা অব্যহত থাকবে।