হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নাজমুল হক কামালের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলার তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এক সাংবাদিক ও প্রাণ কোম্পানির অ্যাডমিন এহসানুল হাবিবসহ মোট দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ২ জুলাই হবিগঞ্জ ইন-সার্ভিস পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে এই সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এই মামলার তদন্ত করছেন হবিগঞ্জ ইন-সার্ভিস সেন্টারের পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান, যিনি হাইওয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপির নির্দেশে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ২০২৩ সালে দুর্গাপূজা ও কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি থাকা অবস্থায় নাজমুল হক কামাল স্থানীয় তিনটি শিল্প প্রতিষ্ঠান—অলিপুর স্কয়ার ডেনিমস লিমিটেড, তাফরিদ কটন মিলস ও হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের নিকট ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব চিঠি প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপেও পাঠানো হয়েছিল।
নাজমুল হক স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্রে লেখা ছিল, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩০০ প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি, ৩০ কেজি জিলাপি, ৩০ কেজি মিষ্টি, ৩০০ পিস দই ও ফলমূল বাবদ ১ লাখ টাকা এবং কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে আরও ৫০০ প্যাকেট খাবার, ব্যানার, মাইকিং, ক্যাপ ইত্যাদি বাবদ আড়াই লাখ টাকা করে সহযোগিতা চাওয়া হয়। এ বিষয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তে নামে।
হবিগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্য ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামসুল হক, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. খলিলুর রহমান ও এসপি অফিসের বিশেষ শাখার পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। কমিটির তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নাজমুল হক কামালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল হক কামাল রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন।
মামলাটি বিভাগীয় পর্যায়ে চলমান রয়েছে এবং একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে এগোচ্ছে বলে জানা গেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ ইন-সার্ভিস সেন্টারের পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান বলেন, মামলাটি সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে, বিষয়টি হাইওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার দেখছেন, উনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে পারি না।
অভিযুক্ত নাজমুল হক কামাল: তিনি নিজেকে এখনও নির্দোষ দাবি করেছেন। তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. খলিলুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। শায়েস্তাগঞ্জ সাবেক ওসি কামাল আওয়ামী লীগের দাপটে হকারসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতেন। টাকা ছাড়া কথাই বলতেন না, তিনি শায়েস্তাগঞ্জে থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক ঘোষ বাণিজ্য, নিরীহ লোকজনকে হয়রানি এবং ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগও ছিল। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন এক সদর এমপির দাপটে তিনি যা খুশি তাই করতেন এবং আওয়ামী লীগের সভা, মিটিং, মিছিলে স্বয়ং অংশগ্রহণ করে সভায় মাইক হাতে স্লোগান দিতেন, যা একজন পুলিশের দায়িত্বের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি “জয় বাংলা, জাহির ভাই জিন্দাবাদ” বলে বক্তৃতা দিচ্ছেন। এখন যখন ফেঁসে গেছেন, নিজেকে বিএনপির লোক বলেও প্রচার করছেন! অথচ তার আমলে বিএনপি কর্মীরা ব্যাপক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে । এ বিষয়ে হাইওয়ে হেডকোয়াটারের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ দেলোয়ার হোসেন মিঞার ওয়াটস এ্যাপ নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও সাড়া মিলেনি। তবে বিভাগীয় মামলার সার্বিক অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গোপন সূত্র জানিয়েছে।
এই মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে চাকুরী হারাতে পারেন তিনি। এবিষয়ে বিষয়ে এক সাক্ষী নুর উদ্দিন সুমন বলেন, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোই সাংবাদিকতা, আমি বিশ্বাস করি, সাংবাদিকতা মানে শুধু খবর লেখা নয়—মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো, অন্যায়ের মুখোমুখি হওয়া। এই পথ সহজ না, কিন্তু ন্যায় ও বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ বলে আমি কখনও পিছু হটিনি। নাজমুল হক কামালের মতো দুর্নীতিবাজ অফিসারের কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে; ওসি থাকাকালীন তিনি অনেক অসহায় মানুষকে হয়রানি ও নির্যাতন করেছেন। আমি আশা করি তার বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একজন দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়লেই পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত আসবে। প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত কর্মকর্তার চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযুক্ত নাজমুল হক কামাল তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
তবে পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেই তাকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ প্রশাসনের একাধিক সূত্র। শিক্ষার্থী তোফাজ্জল বলেন দুর্নীতিগ্রস্ত একজন কর্মকর্তার কারণে গোটা পুলিশ বাহিনীর সুনাম নষ্ট হতে পারে না। চাঁদা দাবির প্রমাণ মিললেও স্থায়ী ব্যবস্থা ২১ মাসেও নেয়া হচ্ছেনা স্থায়ী ব্যবস্থা