কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় নদী ও পুকুরে পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিকট পদ্মা নদীতে পাট জাগ দিচ্ছে। হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিকট পদ্মা নদীর স্রোতের ভেসে যাচ্ছে পাট। বিভিন্ন সময়ে দরপতন, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, শ্রমমূল্য বৃদ্ধি ও জাগ দেওয়ার পানির অভাবে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। পাটের বর্তমান বাজারদর নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা।
এ বছর ভেড়ামারা উপজেলায় ৪ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। সরকার এবারও চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে পাট কিনবেন বলে আশা প্রকাশ করেন কৃষকরা। বাজারে ভালো দাম, অনুকূল আবহাওয়া এবং সময়মতো কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে মন্তব্য করে কৃষকরা ।
উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাট চাষ হয়েছে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ ও সার বিনা মূল্যে দিয়েছে। গত বছর কৃষকরা প্রতি মণ পাটে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দাম পেয়েছেন। প্রতি বিঘায় বীজ বপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়। পাট চাষে কৃষকরা ভারতীয় একটি জাতের বীজের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ বছর অতিরিক্ত খরা ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত হওয়ায় আশানুরূপ ফলন মেলেনি। তবে এ ব্যাপারে প্রযুক্তি সহায়তাসহ নতুন জাত সম্প্রসারণে কাজ করছে।
কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, পাট কাটা প্রায় ১ মাস আগে থেকে শুরু হয়েছে। নদী ও পুকুরে পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদী ও পুকুরে পানির অভাবে বর্তমানে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ থেকে সোলাইমান বাবার আস্তানা পর্ষন্ত পদ্মা নদীতে পাট জাগ দেওয়া হচ্ছে । পদ্মা নদীতে পাট জাগ দেওয়ার পর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে । এর ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও কৃষকরা পদ্মা নদীতে পাট জাগ দিচ্ছে।
কৃষক হাসান আলী বলেন, বর্তমানে একজন দিনমজুরের ৫০০ টাকা হাজিরা। তার ওপর বেড়েছে বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম। এক বিঘা জমিতে পাট হয় ১০ মণ। পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে মণপ্রতি দুই হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। গত বছর মণপ্রতি পাটের বাজার মূল্য ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিলো। ফলে পাট চাষে আমাদের প্রতিবছর লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। কৃষক সালাম বলেন, পাটের জন্য কুষ্টিয়ার খ্যাতি রয়েছে। ‘খাল-বিলে অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। আবার কোনো কোনো খালে মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পাট জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হয়।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে জাগ দেওয়ার পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তা ছাড়া উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এখন পাট চাষ ছেড়ে দিয়ে শাকসবজি ও মরিচের চাষ করছি। এতে পরিশ্রম কম, লাভ বেশি।’
ভেড়ামারা উপজেলার কৃষি অফিসার শায়খুল ইসলাম বলেন, এ বছর ভেড়ামারা উপজেলায় ৪ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এখন পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষক যেন ভালো দাম পান, এ জন্য সরকার বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং পাটের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নতুন আইন করেছে।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হায়াত মাহমুদ বলেন, পাটের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা প্রদান এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে সবরকম সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা পাট চাষে ভারতীয় জাত জেআরও-৫২৪ বীজের ওপর নির্ভরশীল ছিল। অতিরিক্ত খরা ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয়ে এই জাতটি কৃষকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কৃষকদের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত জাত বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) চাষ জনপ্রিয় করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
যাযাদি/এস