শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণবন্ত বইমেলা শিশুপ্রহর ঘিরে উচ্ছ্বাস

যাযাদি ডেস্ক
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৭
প্রাণবন্ত বইমেলা শিশুপ্রহর ঘিরে উচ্ছ্বাস

বাঙালি বইপ্রেমীদের সবচেয়ে বড় আসর অমর একুশে বইমেলা চলছে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে। শনিবার মেলার ছিল দশম দিন। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় এদিনও মেলা পূর্ণ ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীতে। সকাল থেকেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠা মেলার মূল আকর্ষণ শিশুপ্রহরে ভিড় দেখা যায় শিশুদের। পিতা-মাতা কিংবা বড় ভাইয়ের হাত ধরে মেলায় এসে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে তারা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দর্শনার্থী সমাগম। বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মেলার দশম দিন এসেছে ১৫২টি বই।

সরেজমিন দেখা যায়, সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বেলা ১১টা থেকে বইপ্রেমীরা আসতে থাকেন মেলায়। দুপুরের তপ্ত রোদেও দর্শনার্থীরা ভিড় করেন স্টলে স্টলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের আনাগোনাও দেখা গেছে। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ভর্তি পরীক্ষা থাকায় এদিন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাও ঢুঁ মেরেছেন মেলায়।

এবারের বইমেলা জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে ছুটির দিন এবং অন্যান্য দিন সন্ধ্যায় মেলায় বিপুলসংখ্যক মানুষের আগমন ঘটছে। এতে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য রাজধানীবাসীকে ওই সময় শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিহার করে বিকল্প ট্রাফিক রুট অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে।

শনিবার বইমেলার শিশুচত্বরে কথা হয় রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তাকধুম স্টল থেকে আহসান হাবিবের গল্পের বই কিনেছি। ছোট ভাইয়ের জন্যও বই নিয়েছি। দুপুর আড়াইটার সিসিমপুর শো দেখেছি।’

আরেক দর্শনার্থী সাইফ সামি বলেন, ‘আজ আইবিএতে ভর্তি পরীক্ষা ছিল। কাজিনসহ টঙ্গী থেকে এসেছি। পরীক্ষা শেষে ভাবছি বইমেলা ঘুরে যাব, তাই মেলায় আসা। এখনো বই কেনা হয়নি। তাই খুঁজে খুঁজে দেখছি।’

কুঁড়েঘর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী স্মৃতি সাহা বলেন, ‘আজও মেলায় ভালো জনসমাগম হয়েছে। অন্যদিনের তুলনায় ছুটির দিনগুলোতে মোটামুটি ভালো বেচাকেনা হয়।’

খাবারের দাম ‘বেশি’ নেওয়ার অভিযোগ

মাসব্যাপী বইমেলায় স্টল-প্যাভিলিয়নে প্রকাশকরা সাজিয়ে বসেছেন হরেক রকম বইয়ের পসরা। অন্যদিকে মেলার বাইরে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলোর পাশে বসেছে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান। এসব দোকানে মিলছে, ফুচকা, চটপটি, ভেলপুরি, পানিপুরি, আলুুর টর্নেডো, ছোলার মাখা চানাচুর, মাশরুমের বড়া, হাওয়াই মিঠাই, তিলের খাজা ও মোমোসহ নানান মুখরোচক খাবার।

অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও একপাশে খাবারের স্টলের ব্যবস্থা রেখেছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। তবে মেলার এই অংশটিতে ব্যাপক অব্যবস্থাপনা ও সময়োপযোগী পরিকল্পনার অভাবের অভিযোগ রয়েছে দর্শনার্থী, বিক্রয়কর্মী ও লেখকদের। মেলার খাবার স্টল অংশ ঘুরে দেখা যায়, ইচ্ছামতো দাম বসিয়ে বেচাবিক্রি করছে দোকানগুলো।

বইমেলার খাবার স্টল অংশের পুরোটা এখনো গুছিয়ে ওঠেনি। অধিকাংশই পিঠা আর ফুচকার দোকান। একটি দোকানে পিঠার সঙ্গে রাখা হয়েছে মাংস, লুচি, রুটি। এর বাইরে একটি কফির দোকান, কয়েকটি মোমো আর আইসক্রিমের দোকান। দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে কোনো রকমের পিঠা প্রতিপিস সর্বনিম্ন ৪০ টাকা, ফুচকার প্লেট ৬০ টাকা, মোমো প্রতি প্লেট ৫টা ১০০ টাকা, কফি ৩০ টাকা। আর মাংস, লুচি, রুটির প্যাকেজ রাখা হচ্ছে ৩৫০ টাকা।

মুশতাক-তিশা দম্পতিকে নিয়ে অস্বস্তি অমর একুশে বইমেলার শুরুর সপ্তাহেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন মুশতাক-তিশা দম্পতি। এ বছর খন্দকার মুশতাক আহমেদের দুটি বই প্রকাশ হয়েছে। শুক্রবার বইয়ের প্রচারণায় মেলায় গেলে মুশতাক-তিশা দম্পতির উপস্থিতি নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তারা দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের সহায়তায় মেলা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর গণমাধ্যমে তাদের নিয়ে যেসব প্রতিবেদন করা হয়েছে, এর বেশিরভাগই ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উল্লেখ করে মুশতাক আহমেদ বলেছেন, “অনেকে লিখেছে আমি ‘বইমেলায় যাবো না’, ‘আমাদের বিতাড়িত করা হয়েছে’, ‘আমাদের ধাওয়া দিয়েছে’; কিন্তু বিষয়গুলো এমন ছিল না।” তিনি বলেন, ‘আমার বই প্রকাশ হয়েছে, আমিতো আবারও মেলায় যেতে চাই। কিন্তু এ রকম পরিস্থিতি যেন আর সৃষ্টি না হয়, মেলা কর্তৃপক্ষ সেটি নিশ্চয় দেখবেন।’

আর আয়োজকরা বলছেন, তিনি মেলায় আসতেই পারেন। তবে এতে করে যদি মেলায় কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, এর সম্পূর্র্ণ দায় তার প্রকাশককে নিতে হবে।

আবারও বইমেলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির করণীয় জানতে চাইলে বইমেলা আয়োজন কমিটির সদস্যসচিব কেএম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তিনি মেলায় আসতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির কোনো করণীয় নেই। তিনি সেলেব্রিটি হতেই পারেন। কিন্তু তার জন্য যদি মেলায় কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, আশপাশের স্টল-প্যাভিলিয়ন থেকে অভিযোগ আসে, তাহলে আমাদের জিরো টলারেন্স থাকবে। আর এ জন্য সম্পূর্ণ দায় মিজান পাবলিশার্সকে নিতে হবে।’

এদিকে খন্দকার মুশতাকের বইমেলায় আসার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা বা বাংলা একাডেমির সঙ্গে কোনো আলাপ হয়েছে কিনা প্রশ্নে তার বইয়ের প্রকাশক মিজানুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, ‘উনি আমাদের লেখক। এর আগেও উনার বই আমরা প্রকাশ করেছি। উনি আসতে চাইলে আসবেন। আমরা বাংলা একাডেমির সঙ্গে রোববার বসব।’

বইমেলা ঘিরে ডিএমপির নতুন নির্দেশনা

শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জানান, চাপ সামলাতে ট্রাফিকের নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- ১. যেসব যানবাহন ব্যবহারকারী ভিআইপি রোড ব্যবহার করে মতিঝিল, গুলিস্তান অথবা পুরান ঢাকার দিকে যেতে চান, তারা বিকল্প রোড হিসেবে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি (সাতরাস্তা-মগবাজার-কাকরাইল মসজিদ) ব্যবহার করতে পারবেন। ২. যেসব যানবাহন ব্যবহারকারী মিরপুর রোড-এলিফ্যান্ট রোড ব্যবহার করে মতিঝিল, গুলিস্তান অথবা পুরান ঢাকার দিকে যেতে চান, তারা মিরপুর রোডে নিউমার্কেট-আজিমপুর-পলাশী-চানখারপুল এলাকা ব্যবহার করে গন্তব্যে যেতে পারবেন। ৩. যেসব যানবাহন ব্যবহারকারী পুরনো হাইকোর্ট মোড় হয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে নীলক্ষেত-নিউমার্কেট, আজিমপুর অথবা এলিফ্যান্ট রোডের দিকে যেতে চান, তারা সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল-নিমতলী-শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং- শহীদ মিনার-পলাশী হয়ে যেতে পারবেন।

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় নির্ধারিত পার্কিং এলাকা ছাড়া যানবাহন পার্কিং নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

শনিবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ১৭৫ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। বিচারক হিসেবে ছিলেনÑ শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, চন্দনা মজুমদার এবং সুমন মজুমদার। মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান

বিকালে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সুচিত্রা মিত্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেনÑ সাইম রানা। আলোচনায় অংশ নেন আহমেদ শাকিল হাসমী এবং অণিমা রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেনÑ মফিদুল হক।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘সুচিত্রা মিত্র মূলত রবীন্দ্র-প্রতিভার আলোয় বিচ্ছুরিত এক উজ্জ্বল বর্ণশোভা। তার গায়নশৈলীর মাধ্যমে রবীন্দ্রসঙ্গীত মনন ও সৃজনের অনুপম সৌকর্যে চিত্রিত ও বিকশিত হয়েছে। সুচিত্রা মিত্রের উচ্চারণ-ভঙ্গি ও গীত-ভঙ্গি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার সঙ্গীত পরিবেশনার উচ্চারণ এবং বোধের শুদ্ধতা প্রায় প্রবাদের মর্যাদা পেয়েছিল।’

আলোচকরা বলেন, ‘সুচিত্রা মিত্র কেবল রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীই ছিলেন না, গণসঙ্গীত আন্দোলনেরও একজন অগ্রবর্তী যোদ্ধা ছিলেন। তার পারিবারিক নিবিড় আবহে সঙ্গীতচর্চার প্রচলন ছিল। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতেও তিনি গানের চর্চা, বিকাশ ও পরিবেশনা সমানভাবে চালিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথের গান তাকে শক্তি জুগিয়েছিল। সমগ্র জীবনকেই তিনি পরিমিতি-বোধের মধ্যে বেঁধে রেখেছিলেন। তার সৃষ্টিকর্ম ও সঙ্গীত তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে মফিদুল হক বলেন, ‘আমরা যদি বাংলা গানের সঙ্গে বাংলার সমাজ ও মানবমুক্তির আকুতির সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে যাই, তাহলে প্রাসঙ্গিকভাবেই সুচিত্রা মিত্রের কথা উঠে আসে। সঙ্গীত ও সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়েই এই মহিয়সী শিল্পীকে খুঁজে পাওয়া যায়। তার সাংস্কৃতিক-মানস ও অকুতোভয় আদর্শ আমাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’ আজকের অনুষ্ঠান

বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : কলিম শরাফী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সরওয়ার মুর্শেদ। আলোচনায় অংশ নেবেন মাহমুদ সেলিম এবং গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে