শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

স্পীড ব্রেকারে গতিহীন পিকআপে ট্রাকের ধাক্কায় ২ শ্রমিক নিহত, আহত ১৪

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ০৪ মে ২০২৪, ০৯:১০
আপডেট  : ০৪ মে ২০২৪, ১৬:০০
ছবি-যায়যায়দিন

গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা- শ্রীপুর আঞ্চলিক সড়কের পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামে মাটি বাহী ড্রাম ট্রাক ও পিকআপের সংঘর্ষে দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১৪ জন। শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ওই গ্রামের কাউন্সিলরের বাড়ি সংলগ্ন স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, মোঃ রাসেল মিয়া (২৫)। তিনি সুনামগঞ্জ সদরের ডুমুরা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। অপরজন মোঃ আবু সুফিয়ান (২৭) । তিনি একই উপজেলার একই গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। এ দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন, খাইরুল ইসলাম (২৫), পারভিন আক্তার (৫২), আলমগীর হোসেন (১৯), মোঃ সুরুজ (২৮), মোঃ লাল মিয়া (৪০), মোঃ নুরুল ইসলাম (২০), আমির মিয়া (৪৮), মোঃ মহসিন (২৮), আবু হানিফ (২০), মোঃ এরশাদ (২৫), মোছাঃ আম্বিয়া (৩০), ওয়াহাব উদ্দিন (৩০), মিজানুর রহমান (৩৫) ও আবদুল হাই (২৯)। তাদের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আহতদের একজন আব্দুল ওহাব মুঠোফোনে বলেন," গোসিংগা এলাকায় ঢালাই শেষে আমরা বাড়ি ফিরছিলাম। ওই এলাকায় পৌঁছাতেই আমাদের বহনকারী পিক-আপটি সেখানে থাকা স্পিড ব্রেকারে গতি কমিয়ে আনলে পেছন থেকে দ্রুত গতির একটি ড্রাম ট্রাক ধাক্কা মারে। এতে পিকআপটি সড়ক থেকে ছিটকে দূরের ওয়ালে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আমি শুনেছি। তবে ওই লোকের নাম জানতে পারিনি"।

নিহতের স্বজন ও চিকিৎসাধীন আহতদের বর্ণনামতে ফায়ার সার্ভিস জানায়, ওই দুর্ঘটনার শিকার সবাই নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। গত দুইদিন ধরে শ্রীপুরের গোসিংগা এলাকায় নির্মাণ কাজ করছিলেন তারা। গত রাত ৪ টা পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। পরে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন তারা। নির্মাণ শ্রমিকরা সবাই একটি পিকআপে করে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই পিকআপে মোট ১৬ শ্রমিক ও একটি মিকচার মেশিন ছিল। মাওনা- শ্রীপুর আঞ্চলিক সড়কের ভাংনাহাটি এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে দ্রুতগতির একটি মাটিবাহী ড্রাম ট্রাক তাদের পিকআপকে ধাক্কা দেয়। এতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভুষণ দাস বলেন, "ভোর রাতে দুজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাহাদের কয়েকজনকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যাদের অবস্থা আশংকাজনক তাদের অন্যান্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে "।

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বে থাকা বেলাল আহমেদ বলেন," পৌনে পাঁচটার দিকে এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এসময় দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। তাদের মধ্যে ২জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। একজনের অবস্থা সেসময় আশংকাজনক ছিল। এরপর কেউ মারা গেছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে পারবো "।

তিনি বলেন," সড়কের ওই স্থানে থাকা স্পিড ব্রেকারে পিক-আপের গতি কমিয়ে আনলেও হয়তো ট্রাক ড্রাইভার সেটি ফলো করেনি। তাই, সংঘর্ষের পর প্রায় ২০-২৫ ফিট পর্যন্ত চলে যায় পিকআপটি। যাতে ছিল ১৬জন মানুষ ও মিকসার মেশিন "।

ঘটনাস্থলের আশপাশের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘটনাস্থলের সড়কে দেওয়া ওই স্পিড ব্রেকার কতোটা যুক্তিযুক্ত তা বোধগম্য নয়। অথচ, ভাংনাহাটি কাচ্চাগড় এলাকায় একই সড়কের পাশেই একটি আলিয়া মাদ্রাসা, মসজিদ, কিন্ডারগার্টেন ,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সড়কের এ অংশে কোনো স্পিড ব্রেকার দেয়নি কর্তৃপক্ষ। অথচ ওই স্থানে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটি স্পিড ব্রেকার দেওয়া হয়েছে। এটিতে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে ঘটনাস্থলের পাশেই পৌর কাউন্সিলরের নিজস্ব বাসভবন। স্পীড ব্রেকারের অনুমতি আছে কিনা এবং গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান মন্ডল বলেন," এ স্পিড ব্রেকারটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের অনুমতি রয়েছে। এর জন্য দুর্ঘটনা হয়নি। মানুষ মরনশীল। কার মরণ কোথায় হবে তা জানা নেই "। এখানে এ স্পিড ব্রেকারের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এটা নিচু ও সড়কের প্রায় লেভেলে রয়েছে। এখানে ড্রাম ট্রাকের গতির দোষ"।

সড়কের ওই অংশে দেওয়া স্পিড ব্রেকার অনুমতি আছে কিনা এ সম্পর্কে বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজনে সড়ক ও জনপদ বিভাগের গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম শরিফুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পরে একই অফিসের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী ফেরদৌসী বেগমের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনিও রিসিভ করেননি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান যায়যায়দিনকে বলেন," খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় ড্রাম ট্রাক আটক করা হয়েছে। তবে, চালক বা চালকের সহকারীকে পাওয়া যায়নি। নিহতদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ চলমান"।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে