সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি ‘আশানুরূপ না হওয়ায়’ সেটি স্থগিত করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে শনিবার (২৪ মে) দুপুর ২টায় এই সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেখানে পাঁচজন সাংবাদিক হাজির হন। পরে সাংবাদিকদের অপেক্ষায় আরও দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করা হয়। শেষমেষ আর কেউ না আসায় অনুষ্ঠান স্থগিতের ঘোষণা দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ওই সংবাদ সম্মেলনটি হওয়ার কথা ছিল। তবে সেদিন ‘অনিবার্য’ কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠান স্থগিতের কথা জানায় বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ। সংবাদ সম্মেলনটি শনিবার দুপুর ২টায় আয়োজনের কথা বলা হয়।
তবে অনুষ্ঠান শুরুর সময় হলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও বাংলা একাডেমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েক মিনিট পর পর এসে সভাকক্ষে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে তথ্য দেন উপদেষ্টার দপ্তরে। দুপুর আড়াইটায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাপাঁচেক সাংবাদিকের উদ্দেশে বলেন, সংবাদ সম্মেলন শুরু হবে দুপুর ৩টায়।
পরে ৩টায়ও সাংবাদিকের উপস্থিতি না বাড়ায় আধা ঘণ্টা পর এসে সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহা. খালিদ হোসেন সেসময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক আজম বলেন, “সাংবাদিক উপস্থিতি আশানুরূপ না হওয়ায় আজকেও দ্বিতীয়বারের মত সংবাদ সম্মেলনটি স্থগিত করতে হচ্ছে। পরে নতুন তারিখ ঠিক হলে, তা সাংবাদিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।”
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খালিদ হোসেন জানান, উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনের আমন্ত্রণ জানানো হয় মন্ত্রণালয়ের তরফে।
তবে একাধিক সংবাদমাধ্যমের সংস্কৃতি বিটের সাংবাদিকরা বলছেন, এ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তথ্য পাননি বেশিরভাগ সাংবাদিক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক দ্রোহী তারা বলেন, “সংবাদ সম্মেলনটির কথা মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে জানানো হয়নি। আমি অন্য মাধ্যমে জেনে এখানে এসেছিলাম। এসে দেখলাম সংস্কৃতি বিটের বেশিরভাগ সাংবাদিকই সংবাদ সম্মেলনটির কথা জানেন না।”
তার ভাষ্য, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বেশিরভাগ সংবাদ সম্মেলনই সচিবালয়ে আয়োজন করা হয়, যেখানে সংস্কৃতি বিটের সাংবাদিকদের জানানো হয় না। এতে সংস্কৃতি বিটের সাংবাদিকদের সাথে মন্ত্রণালয়ের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এর প্রতিফলন ফুটে উঠেছে বাংলা একাডেমি সংস্কার বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক পাভেল রহমান উপসচিব মোহা. খালিদ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলেও তথ্য পাওয়া যায় না।
জবাবে উপসচিব বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে তিনি জানাবেন।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করা এবং তার সঙ্গে সাংবাদিকদের পাল্টাপাল্টি কথা হয়। ওই ঘটনার পর দীপ্ত টিভির বুলেটিন কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।
সেইসঙ্গে দীপ্ত টিভির সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট মিজানুর রহমান, এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী ও চ্যানেল আই অনলাইনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল বাসারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
যদিও বিষয়টি নিয়ে পরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেনি সরকার। ‘গণহত্যার পক্ষে’ প্রশ্ন করায় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ নিজেই এ সিদ্ধান্ত নেয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘বাহাসের’ ঘটনার পরদিন রাতে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন ফারুকী। সেখানে তিনি লেখেন, “...আজ সন্ধ্যায় জানলাম চ্যানেলগুলা তাদের চাকরিচ্যুত করেছে। প্রত্যেক চ্যানেলেরই নিজস্ব এডিটোরিয়াল পলিসি থাকে। তারা সেই পলিসির আলোকে কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’
‘তারপরও অনলাইনে কাউকে কাউকে একটা কথা বলার চেষ্টা করতে দেখছি যে আমাকে প্রশ্ন করায় চাকরি গেছে তাদের। হাস্যকর কথা। বিষয়টা যে আমি না, বিষয়টা যে জুলাই এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পলিসির ব্যাপার- এটাও তারা বুঝতে পারছে না’ লিখেন তিনি।