শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের সংকট, পাকিস্তানে আতঙ্ক-উদ্বেগ

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:৫২
ফাইল ছবি

পাকিস্তানের অর্থনীতি পৌঁছেছে খাদের কিনারে। মূল্যস্ফীতিতে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষ জ্বালানি, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে দিন কাটাচ্ছে আতঙ্ক আর উদ্বেগে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারও। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে (রিজার্ভ) টান পড়ার পাশাপাশি বিপুল ঋণ শোধের চাপে আক্ষরিক অর্থেই দিশেহারা দেশটি। তারপরও দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দিকেই তাকিয়ে আছে দেশটি। তবে নানা শর্তের কারণে আইএমএফের সঙ্গে ১০ দিনের আলোচনায় কোনো দিশা পায়নি দেশটি। তাই শেষ অবধি জনগণের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপানোর পথেই হাঁটছে দেশটি। গত সোমবার এ লক্ষ্যে একটি বিলও পাস করা হয়েছে দেশটির পার্লামেন্টে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, আইএমএফের শর্ত পূরণে আগামী সাড়ে চার মাসের মধ্যে শাহবাজ শরিফ সরকার নতুন করে রাজস্ব হিসেবে ১৭ হাজার কোটি রুপি বাড়তি আদায় করতে চায়। আইএমএফ দেশটিকে বছরে ৮৫ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব আদায়ের শর্ত দিয়েছে। আর তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন সম্পূরক অর্থ বিলটি পাস করা হয়েছে। ডন বলছে, বিলে সিগারেটের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো এবং সাধারণ বিক্রয় কর হার ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। এই দুটি ব্যবস্থা থেকে ১১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি আয় হবে বলে আশা করছে দেশটির সরকার।

বিক্রয় কর বা জিএসটি এক শতাংশ বাড়লেও বিলাস দ্রব্যের ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে। মোট ৩৩টি খাতে বিক্রয় কর ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। দামি মোবাইল ফোন, আমদানি করা খাদ্য, সাজসজ্জার উপকরণ ও বিলাস দ্রব্য বিক্রির ওপর থেকে এই বাড়তি আয় করা হবে। উড়োজাহাজে প্রথম শ্রেণি ও বিজনেস ক্লাসে ৫০ হাজার রুপির ওপর ভাড়ায় ২০ শতাংশ ফেডারেল এক্সাইজ ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। এই খাত থেকে বাড়তি এক হাজার কোটি রুপি আসবে। এ ছাড়া বিয়ের হল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট বা বাণিজ্যিক অবকাশযাপন কেন্দ্র, ক্লাব বা অন্য কোথাও কোনো আয়োজনের ওপর আরোপ করা হয়েছে ১০ শতাংশ অগ্রিম কর। এই খাত থেকে ১০০ থেকে ২০০ কোটি রুপি আয় হবে বলে আশা সরকারের। এর বাইরে আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম উৎপাদন মূল্যে রাখা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা আছে।

এই পদক্ষেপগুলো নিত্যপণের দাম বাড়িয়ে দেবে বলে যে আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে, তা থেকে গরিব মানুষকে রক্ষায় একটি বিশেষ উদ্যোগের কথাও বলা আছে বিলে। বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রামের বাজেট ৩৬ হাজার কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি। আইএমএফ আগামী ১ মার্চের মধ্যে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের শর্ত দিয়েছে।

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার আশায় গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১০ দিন আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছে দেশটির সরকার। তবে চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়নি। তবে দুই পক্ষই জানায়, আলোচনা এখনো ভেস্তে যায়নি। চুক্তি চূড়ান্ত করতে আগামী দিনেও আলোচনা চালু থাকবে।

এদিকে রয়টার্স বলছে, আইএমএফ থেকে ঋণ যদি মেলেও, তারপরও পুরোপুরি স্বস্তিতে থাকতে পারছে না পাকিস্তান। কারণ চলতি বছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে, সেই পরিমাণ ডলার জোগাড় করা কঠিন হয়ে যাবে দেশটির জন্য। এক হিসাব অনুযায়ী আগামী ১২ মাসে ২২ বিলিয়ন ডলার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে পাকিস্তানকে। এ অবস্থায় বিল পাস করালেও আইএমএফের সঙ্গে শর্তের দরকষাকষিকে পেরেশানি হিসেবে উল্লেখ করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার। তবে তার ভাষ্য, এরপরও তাদেরকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নইলে দেশের অর্থনীতি আরও তলানিতে নামবে। তার দাবি, তারা যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে চাইছেন, তা দেশটির গরিব মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। এটি কেবল বিলাস দ্রব্য আমদানি ও বিক্রির ওপর থেকে নেওয়া হবে।

এদিকে আইএমএফের ঋণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা এবং সরকারের এসব নতুন পদক্ষেপ দেশের সাধারণ মানুষ এবং শিল্প খাতে চাপ আরও বাড়িয়ে দেবে, এমন আশঙ্কার মধ্যে গত সোমবার দেশটির পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এক দিনেই মূল্যসূচক কমেছে ৪৪৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ০৮ শতাংশ।

আবা আলি হাবিব সিকিউরিটিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা শাখার প্রধান সালমান নাকভি মনে করেন, এই দরপতনে অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা, দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচতে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি নিশ্চিত করতে না পারার মতো কয়েকটি নেতিবাচক বিষয় ভূমিকা রেখেছে।

এর মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়াতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে দেশটির আর্থিক খাতে। বলা হচ্ছে, আগামী ১৩ মার্চ এ বিষয়ে দেশটির মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক থাকলেও এর আগেই তা জারি হতে পারে।

এর মধ্যে অবশ্য গত রবিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের খাজা আসিফের একটি বক্তব্য আলোড়ন ফেলে দেয়। পাকিস্তান ইতিমধ্যে দেউলিয়া হয়ে গেছে, এমন মন্তব্য করে এজন্য ক্ষমতাচক্র, আমলাতন্ত্র, রাজনীতিবিদসহ সবাইকে দায়ী করেন তিনি। তার বক্তব্য সরকারি ভাষ্য না হলেও পাকিস্তানকে বিপুল ঋণ দেওয়া সৌদি আরব, চীন, আরব আমিরাত পাশে না দাঁড়ালে শিগগিরই সত্যি হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য। প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা হওয়া থেকে ফেরা সম্ভব হবে না দেশটির সরকারের পক্ষে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে